reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ জানুয়ারি, ২০১৯

‘২০ হাজার টাকা দাও ছাড়িয়ে নিয়ে যাও’ (ভিডিও)

মুরগী চুরির অভিযোগে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার এক কিশোরকে বেঁধে প্রকাশ্যে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনার দুই মাস পর সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

রোববার দিবাগত রাতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আমজাদকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হন সহকারী পুলিশ সুপার রাশেদুল রহমান (লালমোহন) মিজানুর রহমান (চরফ্যাশন) সার্কেল, শশীভুষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ও ডিবি পুলিশ।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার জানান, গত ১৫ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে হাজারীগঞ্জে মুরগী চুরির অপবাদে ৯নং ওয়ার্ডের আব্দুল মালেকের ছেলে রুবেলকে (১৪)স্কুল মাঠে প্রকাশ্যে অমানবিক নির্যাতন করে ইউপি সদস্য আমজাদ। এ সময় রুবেলকে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেয়নি আমজাদের লোকজন। ২ মাস পর নিযার্তনের ভিডিও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে শশীভূষণ থানা মামলা গ্রহণ করে।

রুবেলের মা বিলকিস বেগম বাদী হয়ে ইউপি সদস্য আমজাদসহ ৬ জনকে আসামি করে গত ১৮ জানুয়ারি শশীভূষণ থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার পর থেকে আমজাদ ও তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর মধ্যরাতে ইউপি সদস্য আমজাদের কাছে কিশোর রুবেলে বিরুদ্ধে মুরগী চুরির অভিযোগ করে কবির তালুকদার নামে এক ব্যক্তি। পরে আমজাদ তার লোকজন নিয়ে রুবেলকে মেঘনা নদীর পাড় থেকে ধরে বাড়ির কাছে হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আসে। পরে রুবেলের হাত-পা বেঁধে পায়ের নিচে লাঠি দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় এলোপাতাড়ি মারধর করে। মারতে মারতে আমজাদ রুবেলকে বলে সত্যি কথা বল।

এদিকে খবর পেয়ে মা বিলকিছ বেগম রুবেলকে উদ্ধার করতে ছুটে গেলে আমজাদ তাকে ছাড়িয়ে নিতে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় রুবেলকে ছাড়িয়ে নিতে পারেননি মা বিলকিস। দিনভর নির্যাতনের পর বিকেলে কিশোর রুবেলকে ছেড়ে দিলে মা বিলকিছ চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য চেষ্টা করলে তাকে নিতে দেয়নি আমজাদ ও তার লোকজন। পরে ওই ঘটনার কিছুদিন পর চরফ্যাশন হাসপাতালের চিকিৎসক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর কাছে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নেয় রুবেল।

কেন আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়নি সংবাদকর্মীরা জানতে চাইলে বিলকিছ বেগম জানান, আমজাদ ও তার লোকজন আমাকে অনেক হুমকি-ধামকি দিয়ে এলাকায় আটকে রাখে। এরপরেও অনেক কষ্টে নির্যাতিত কিশোর রুবেলকে নিয়ে শশীভূষণ থানায় গিয়ে ওসি’কে না পেয়ে উপ-পুলিশ পরিদর্শক(এসআই) পবিত্র কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে থানা থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

পরে নির্যাতিত পরিবারকে হুমকি-ধামকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় আমজাদ। রুবেলকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র আমজাদ ও তার সহযোগীরা এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে শেয়ার করলে তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। মা বিলকিছ তার ছেলের নির্যাতনের ভিডিওটি হাতে পেয়ে শশীভূষণ থানার ওসি মনিরুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন। গত ১৮ জানুয়ারি ওসি বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা গ্রহণ করেন।

ওসি মনিরুল বলেন, ‘কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার ভিডিওচিত্র আমার কাছে আছে। নির্যাতনের চিত্র আসহনীয় তাই আসামিদের ধরার চেষ্টাও অব্যাহত আছে।’

উপ-পুলিশ পরিদর্শক(এসআই) পবিত্র কুমারের কাছে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ না করে থানা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ওসি বলেন, ‘বিয়ষটি আমার জানা নাই। আমি জানতে পারলে তখনই মামলা নেওয়া হতো।’

এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার বলেন, ‘ঘটনার দিন কিশোরের মা আমার কাছে অভিযোগ করলে আমি থানায় পাঠিয়ে দেই। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

ভিডিও দেখুন :

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
২০ হাজার টাকা,ছাড়িয়ে নিয়ে যাও
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close