reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

পরিযায়ীর আগমনে প্রাণ পায় আকোনভাটপাড়া

শার্শার পদ্মবিল অভয়ারণ্য

শীত এলেই যেন প্রাণ ফিরে পায় আকোনভাটপাড়া গ্রাম। সুদূর শীতপ্রধান দেশ থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখিদের খুনসুটি আর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম। এসব পরিযায়ী পাখি দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ভিড় করে সব বয়সের দর্শনার্থী। এতে পাখির স্বাভাবিক বিচরণ ব্যাহত হচ্ছে। তাই অতিথি পাখিদের জন্য অভয়ারণ্যের সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এছাড়া যশোরের শার্শা উপজেলার পদ্মবিল হয়ে উঠেছে পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট :

ফরিদপুর : ফরিদপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কৈজুরী ইউনিয়নের আকোনভাটপাড়া গ্রামে গত কয়েক বছর ধরেই শীতের শুরুতেই অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এ সময় অতিথি পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে ওই গ্রামের মানুষের।

শীতে শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি চলে আসে নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে। আর শীত চলে গেলে এরা ফিরে যায় নিজ নিজ দেশে। পৃথিবীটা শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণির। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সব প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে।

পাখিরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। প্রাকৃতিক বনায়নে পৃথিবী সৃষ্টির আদি থেকেই কাজ করছে পাখি। এরা জলজ পোকা, ইঁদুর, কখনো কখনো ধানের পোকা খেয়ে কৃষকের উপকার করে থাকে। পাখি শুধু নিজেরা বাঁচে না, প্রকৃতি ও মানুষকেও বাঁচায়। আর সেজন্যই অতিথি পাখির বিচরণের জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা জরুরি বলে মনে করেন অনেকে। এলাকাবাসী বলেন, এই পাখির কারণেই আমাদের গ্রাম পরিচিতি পেয়েছে। আমরা চাই বন বিভাগ অতিথি পাখির বিচরণে নিরাপদ অভয়াঅরণ্য সৃষ্টি করবে। অতিথি পাখি দেখতে আশা প্রকৃতি খন্দকার বলেন, পাখির অবাধ বিচরণের বন বিভাগের মনোযোগী হওয়া উচিত।

ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. এনামুল হক ভূঁইয়া বলেন, পর্যাপ্ত খাবার থাকার কারণে আকোনভাটপাড়ায় অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে। পাখিগুলোকে যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে, সেজন্য কিছু সচেতনামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এরই মধ্যে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি। ওই এলাকায় নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাখিদের বিরক্ত না করতে দর্শনার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফরিদপুরবাসী।

বেনাপোল (যশোর) : ৫০ গজ দূরেই কাঁটাতারের বেড়া, তার ওপারে প্রতিবেশি দেশ ভারত। এপারে সবুজ বেষ্টনীতে ঘেরা যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রাম। বেনাপোল থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান করা এ গ্রামের পাশেই ৭০ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে পদ্মবিল। পৌষের শেষ ও মাঘের প্রথমে হাড় কাঁপানো শীতে ওই পদ্মবিলে নতুন প্রাণ ফিরে আসে পরিযায়ী পাখির আগমনে। শার্শার পদ্মবিল এখন এসব অতিথি পাখির অভয়ারণ্য।

পদ্মবিলের নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশ এখন পারিযায়ী পাখির কলতানে মুখরিত। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত পাখিপ্রেমীরা ভিড় করছেন পদ্মবিলে। উপভোগ করছেন পাখিদের খুনসুটি। তবে এলাকাবাসীর কড়া নজরদারির কারণে পাখি শিকার নিষিদ্ধ রয়েছে। এ কারণে সেখানে পাখির অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

দর্শনার্থী আব্দুল জববার ও আলী হোসেন বলেন, পাখির কিচিরমিচির, উড়াউড়ি আর খুনসুটি মুগ্ধ হওয়ার মতো দৃশ্য। সবাই প্রাণভরে উপভোগ করছেন। নির্জন নৈস্বর্গিক জলাশয়ে পাখির অভয়ারণ্যে এসে পুলকিত তারা।

দুর্গাপুর গ্রামের মনির হোসেন ও মোহম্মাদ আলী বলেন, কেউ যাতে ফাঁদে পেতে পাখি শিকার করতে না পারে তার জন্য সজাগ গ্রামের মানুষ। তবে নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশ। এ গ্রামের শামিম হোসেন ও আরমান আলী বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা যদি অভয়ারণ্যের জন্য পাখির খোঁজখবর নিত তাহলে আরো বেশি পাখি এখানে আসত।

পাখির এ অভয়ারণ্য রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে জানান লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম। শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ বলেন, পাখি শিকারিদের আমরা কঠোর নজরদারিতে রাখছি। পদ্মবিলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাখি সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আকোনভাটপাড়া গ্রাম,পরিযায়ী,অতিথি পাখি,অতিথি পাখির আগমন,পদ্মবিল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close