মাজহারুল ইসলাম মিশু
হালুয়াঘাটে ১০ তরুণের টার্কি মুরগি খামারে সাফল্য
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ৪ নং সদর ইউনিয়নের মরাগাংকান্দা গ্রামের ১০ জন শিক্ষিত তরুণ নিজেদের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন টার্কি মুরগির খামার। ৭ একর জায়গায় শখের বসে ঘরে তোলা এই খামার করে লাভবান ওই তরুণরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, মরাগাংকান্দা গ্রামে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ৭ একর জায়গায় প্রকল্প শুরু করলেও, প্রাথমিক পর্যায়ে ২ একর জায়গার উপর ‘দিএমকে এগ্রো’ নামে খামার গড়ে তোলেন আবদুল্লাহ আল মামুন, এস এম শাহজাহান, সারোয়ার, সজিব, বিল্লাল, মিজান, মানিক, সুমন, ইকবাল, আরিফ নামে ১০ শিক্ষিত তরুণ। প্রথমে মানিকগঞ্জ ও ঢাকা টার্কি ফার্ম থেকে ৩০০ বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন তারা। টার্কি মুরগির পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু ও মৎস্য ফিসারিজ গড়ে তুলেছেন ১০ তরুণ। বর্তমানে খামারটিতে প্রায় ৫০০ টার্কি মুরগি আছে। পাশাপাশি ৪টি দুগ্ধ গরু, ৮টি উন্নত জাতের ষাড় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে গরুর খামার।
এছাড়াও মাছ চাষের পুকুর রয়েছে খামারটিতে। টার্কি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ২৭ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন মেশিন। ডিম পাড়া মুরগি রয়েছে ৪০টি, যা থেকে প্রতিদিন ৩০/৩৫টি ডিম সংগ্রহ করা হয়। মেশিনে ডিম রাখার ২৮ দিন পর বাচ্চা ফুটে। দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমির শাক, বাঁধাকপি ও ঘাস জাতীয় খাবার খায় টার্কি মুরগি। ৪ মাস পর থেকে টার্কি মুরগি খাওয়ার উপযোগী হয়। ৬ মাসে মুরগির ওজন হয় প্রায় ৬/৭ কেজি। প্রতি কেজি মুরগির মাংস বিক্রি হয় ৪শ থেকে ৫০০ টাকায় ও জীবন্ত মুরগি কেজিতে বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। এখান থেকে পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ি, নকলা, ধোবাউড়া উপজেলায় পাইকাররা মুরগি ও বাচ্চা ক্রয় করে নিয়ে যান। তাছাড়া মাংস প্যাকেট করে রাজধানী ঢাকাতেও পাঠানো হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন খামারের প্রধান উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। ১ মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি হয় জোড়া ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। টার্কি একটি বড় আকারের গৃহপালিত পাখি। ময়ুরের মতো পেখর মেলতে পারে।
জানা গেছে, ১৭শ সালে যুক্তরাজ্য ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে টার্কি মুরগির জাত উৎপাদন করা হয়। উত্তর আমেরিকা টার্কি মুরগির উৎপত্তিস্থল। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই টার্কি মুরগি পালন করা হচ্ছে। অনেকটা খাসির মাংসের মতোই এ মুরগির মাংসের স্বাদ। এ মাংসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও কম পরিমাণে চর্বি রয়েছে। সুস্বাদু এই মুরগির রোগ-বালাই তেমন হয় না। টার্কি মুরগির পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের কবুতর, হাঁস ও বিভিন্ন জাতের মুরগি পালন করবেন বলে জানান ফার্মের উদ্যোক্তারা।
খামারের আরেক উদ্যোক্তা ইকবাল বলেন, টার্কির খাবারের জন্য কোনো সমস্যা হয় না। দানাদার থেকে কলমির শাক, বাঁধাকপি ও ঘাস পছন্দ করে টার্কি। মাংস উৎপাদনের জন্য দানাদার খাবার দেওয়া হয়। আর ডিমের জন্য ৭/৮ কেজি ওজন হয়ে থাকে। টার্কির রোগ-বালাই খুবই কম। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দিতে শুরু করে। ৬ মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় ৪/৫ কেজি। আর পুরুষ টার্কিগুলো হয় প্রায় ৭/৮কেজি।
তিনি আরো জানান, টার্কির দাম তুলনামূলক একটু বেশি। চর্বি কম হওয়ায় অন্যান্য পাখির তুলনায় মাংস খুবই সুসাধু। তবে বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদন এবং টার্কি বৃদ্ধি করা হবে।
আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার পরিবারসহ ঢাকায় থাকি। আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার। আমি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখানে বাবার কেনা ৭ একর জমির উপর একটি টার্কি মুরগির ফার্ম করার কথা মাথায় আসে। আমি আমার চাচাতো ভাইদের বিষয়টি বলি। তারাও রাজি হয়ে যায়। সেই থেকে একটু একটু করে এটাকে গড়ে তুলছি। আমাদের এখানে সবাই শিক্ষিত, কেউ কেউ ভার্সিটিতে পড়ছে। প্রথমে শখের বসে তৈরি করলেও বাণিজ্যের বিষয়টি মাথায় ছিল। আমাদের এখানে মুরগি বা গরু পালনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যগুলো খাওয়াই। গত বছর থেকে শুরু করলেও প্রতিমাসে টার্কি মুরগি ও দুধ বিক্রি করে মাসে আমাদের ৭০ হাজার টাকার উপর আয় হয়। আমরা সে টাকা আবার এখানেই খরচ করছি। যেহেতু আমাদের এখনো ৫ শতক জায়গা পড়ে আছে সেখানে মাছ চাষ এবং বিভিন্ন জাতের পাখি বাণিজ্যিকভাবে পালন করবো। সঙ্গে গরু মোটাতাজাকরণের জন্যও চেষ্টা করছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল আলম জানান, টার্কি মুরগি রোগ-বালাই ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এটি পালন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
পিডিএসও/প্রতিনিধি/হেলাল