হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি

  ০৫ জানুয়ারি, ২০১৯

আন্দোলন করে পুরো টাকাই নিলেন আনসার সদস্যরা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আন্দোলন করে সরকারি বরাদ্দকৃত ভাতার পুরো টাকাই বুঝে নিলেন আনসার সদস্যরা। শনিবার সকালে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্যরা তাদের ভাতার পুরো টাকাই বুঝে নেন।

এর আগে গত শুক্রবার নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ৩৬ জন আনসার সদস্যকে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকার তিন ভাগের একভাগ দিয়েছিলেন ওই ওয়ার্ডের আনসার লিডার (দলনেতা) সোহেল হোসাইন। এতে আনসার সদস্যরা ক্ষুদ্ধ হয়ে শনিবার সকালে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে হট্টগোল শুরু করেন।

এরপর আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়া ও স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদ মজুমদারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানান। পরে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন এবং উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাকে বরাদ্দকৃত ভাতার পুরো টাকা বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেন।

এ টাকা স্ব-স্ব আনসার সদস্যকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ইমন দাশ গুপ্তসহ স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আজাদ মজুমদার, সাবেক কাউন্সিলর বাবুল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফেজ মোস্তফা কামালসহ ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এর পরেই কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে আনসার সদস্যদের ভাতার পুরো টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়।

উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারিভাবে পিসি (প্লাটুন কমান্ডার) ও এপিসিদের (সহকারী প্লাটুন কমান্ডার) দৈনিক ভাতা, শুকনো খাবার ও যাতায়াত ভাতাসহ জনপ্রতি ৫ হাজার ৭ টাকা এবং সদস্যদের জন্য জনপ্রতি ৪ হাজার ৫’শ ৫৭টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত এই টাকা স্ব-স্ব দলের লিডারদের হাতে বুঝিয়ে দেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা।

আন্দোলনকারীরা সাবেক লিডার ও বর্তমান পিসি মো. কাউসার হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জানান, নির্বাচনে দায়িত্বপালনে পিসি ও এপিসিদের জন্য বরাদ্দকৃত জনপ্রতি ৫ হাজার ৭টাকার স্থলে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন আমাদের ওয়ার্ড লিডার সোহেল হোসাইন। এর আগে কাগজপত্র ঠিক করার নামে আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫’শ টাকা করে অগ্রিম নিয়ে নেন সোহেল।

একই অভিযোগ করে আনসার সদস্য রিপন ও মহিলা আনসার সদস্য মনিহার আক্তার জানান, পুরুষ সদস্যদের ৪ হাজার ৫’শ ৫৭ টাকার স্থলে ১ হাজার ৮’শ টাকা ও মহিলা সদস্যদের ১ হজার ৫’শ টাকা দিয়েছেন লিডার সোহেল হোসেন। তারপর নির্বাচনের আগে কাগজপত্র ঠিক করার নামের আমাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫’শ টাকা করে অগ্রিম নিয়ে নেন সোহেল।

এ বিষয়ে আনসার লিডার (দলনেতা) সোহেল হোসাইন জানান, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কাগজপত্র ফটোকটি, সংশোধন ও ছবিসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ হয়েছে। পরবর্তীতে তা সমাধান হয়ে গেছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড পৌর কাউন্সিলর আজাদ হোসেন মজুমদার বলেন, আনসাররা তাদের ভাতার বরাদ্দকৃত টাকার চেয়ে অনেক কম টাকা পাওয়ার আন্দোলন করে। পরবর্তীতে ইউএনও স্যারের নির্দেশনায় আমরা স্ব-স্ব আনসারের হাতে পুরো টাকা বুঝিয়ে দিয়েছি।

উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ইমন দাশ গুপ্ত বলেন, পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড দলনেতা সোহেল হোসেনের বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পরেই ইউএনও স্যারের নির্দেশে ওই ওয়ার্ডের সকল সদস্যকে ডেকে এনে তাদের হাতে ভাতার সম্পূর্ণ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর রেখেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়ুয়া বলেন, নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী একটি ওয়ার্ডের আনসার সদস্যদের ভাতার টাকা কম দেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। পরে দায়িত্বরত কর্মকর্তাসহ ৪ জনের একটি কমিটি করে দিয়েছি। তারা ওই ওয়ার্ডের স্ব-স্ব আনসার সদস্যকে ভাতার পুরো টাকাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে অন্য ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোতে একইভাবে ভাতার টাকা বিতরণ করা হবে।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হাজীগঞ্জ,আন্দোলন,আনসার,টাকা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close