রাজবাড়ী প্রতিনিধি

  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

রাজবাড়ী মুক্ত দিবস মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

পদ্মার তীর ঘেরা ছোট্ট শহর রাজবাড়ী মূলত রেলওয়ের শহর হিসেবে পরিচিত। রেলের শহরের সুবাদে এ শহরে ১৫ থেকে ২০ হাজার অবাঙ্গালি বিহারীরা বসবাস করতো। শহরের নিউ কলোনি, আঠাশ কলোনী, ষ্টেশন কলোনী ও লোকোশেড কলোনী এলাকায় ছিলো তাদের বসবাস। আর এ কারণেই রাজবাড়ীতে ছিলো বিহারীদের প্রচন্ড প্রভাব। এখানে বাঙ্গালিরা ছিলো অসহায়।

পুরো রেলটাই ছিলো তখন বিহারীদের দখলে। পাকস্তানি বাহিনী রাজবাড়ীতে প্রবেশের পর বিহারীরা তাদের সঙ্গে যোগ সাজসে নির্বিচারে চালাতে থাকে জ্বালাও পোড়াও এবং গণহত্যা। দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন পর শত্রু মুক্ত হয় রাজবাড়ী।

রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে প্রথম দিকে ৮ টি গ্রুপ মুক্তিযুদ্ধ করে। পরে পাংশা ও যশোর থেকে আরোও কয়েকটি গ্রুপ এসে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। এখানে মুক্তিবাহিনী, বিহারী, পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সঙ্গে তুমল যুদ্ধ হয়। এজন্য সারাদেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও রাজবাড়ী স্বাধীন হয় তারও ২ দিন পর, ১৮ ডিসেম্বর। এদিন পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ফকির মহিউদ্দিন শহীদ হন। এছারাও ওই দিন সকালে একাধিক শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আহাম্মেদ নিজাম মন্টু জানান, ১৯৭১ সালে সৈয়দ খামারীর নেতৃত্বে রাজবাড়ীর অনেক মানুষকে হত্যার পর লোকৌসেড রেল কলোনীর কূপে ফেলা হত। পাশেই থাকা বর্তমান এতিম খানাটি ওই সময় এটি ছিল বিহারীদের গণহত্যার নির্দিষ্ট স্থান।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার আবুল হাসেম বাকাউল জানান, রাজবাড়ীতে বিহারীরা ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে অতিমাত্রায় তৎপর হয় ওঠে। পুরো শহর দখল করে রাখে তারা। ৯ ডিসেম্বর শহরের লক্ষীকোল এলাকায় বিহারীদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংর্ঘষ হয়। ওই দিন বিহারীদের গুলিতে রফিক, শফিক ও সাদিক শহীদ হয়।

১৩ ডিসেম্বর বিহারীরা বিনোদপুর বিদ্যুৎ সরবারাহের প্রহরীকে হত্যা করে। ১৬ ডিসেম্বর পাক-বাহিনীরা আত্মসমর্পণ করলেও রাজবাড়ী শহর তখনো বিহারীদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি। তারপর একে একে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিবাহিনী এসে জেলা শহরে সংগঠিত হয়। শহিদ্দুন্নবী আলম, ফকীর আব্দুর জব্বার, ইলিয়াস মিয়া, সিরাজ আহম্মেদ, আবুল হাসেম বাকাউল, কামরুল হাসান লালী, শহীদুন-নবি আলম, আব্দুল মোতালেব হিরু, সিরাজ আহাম্মেদ, জলিল মাস্টার তাদের কমান্ডে মুক্তিযোদ্ধারা বিহারী কলোনীগুলো ঘিরে রাখে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল জলিল জানান, ১৭ ডিসেম্বর বিহারী ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয় ১৪ জন মেয়েকে। তারা কোনো ভাবেই আত্মসমর্পণ করতে চায় না। তারা বলেছিল ‘হামরা লড়কে মরেগা।’ তাদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ শুরু। এতে প্রায় সকল পুরুষ মারা যায়। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর বেলা ১ টার সময় রেল লাইন ধরে কয়েক হাজার বিহারী আত্মসমর্পণ করে। যাদের বেশির ভাগই ছিলো মহিলা। রাজবাড়ীতে ওই সময়ই ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজবাড়ী জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার জানান, শহরের বিনোদপুর লোকোসেড এলাকায় নির্মিত স্মৃতির বধ্যভূমি যখন নির্মাণ করা হয় তখন একজন পাহারাদার ছিল, সে এটির রক্ষণাবেক্ষন করতো।

রাজবাড়ী জেলায় ৩৭৯ জন মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রাজবাড়ীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৩৫ জন। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, অবিলম্বে দেশের সকল যুদ্ধাপরাধীকে যেন আইনের আওতায় এনে বিচার করা হয় এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজবাড়ী,মুক্ত দিবস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close