নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ নভেম্বর, ২০১৮

ইটভাটার পেটে ফসলি জমি

কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ বেড়েই চলছে। বেশির ভাগ ইটভাটাই নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হচ্ছে—লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, গ্রামগঞ্জ, শহর বন্দরের কাছে, কৃষিজমিতে, নদীতীরে, পাহাড়ের পাশে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। সেই সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়ও ঘটছে। কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের জন্য একদিকে আশপাশের কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবার) তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরে দেশের প্রায় ৯ হাজার ৭০০ ইটভাটায় মধ্যে ৫০ শতাংশই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র ছাড়া ইট উৎপাদন করছে। এতে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত, স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানা পরিবেশগত দূষণ হচ্ছে। এ ছাড়া ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ভাটায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয় এবং কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং অনেক মূল্যবান বিরল প্রজাতির গাছপালাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার ধামরাইয়ে নিয়ম-অনিয়মে গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটার কারণে ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি, দূষণ হচ্ছে পরিবেশ।

জানা গেছে, এসব ইটাভাটায় বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন মাটি প্রয়োজন হয় আর এসব মাটি আসে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফসলি জমি থেকে। জমির যে অংশটা মূলত উর্বর (টপ সয়েল ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উর্বর মাটি) সে অংশের পুরোটাই যাচ্ছে ইটভাটার গর্ভে। নগদ টাকার প্রলোভনে পড়ে জমির মালিকরাও বিক্রি করে দিচ্ছেন মাটি। এদিকে মাটির উর্বর অংশ কেটে নেওয়ায় কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনের মাত্রা হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষিবিদরা।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থেকে বারবাড়ীয়া পর্যন্ত আসতে প্রায় ৫০টির ওপরে ইটভাটা চোখে পড়বে, এ ছাড়াও কালামপুর-বালিয়া, ধামরাই-শরীফবাগের সড়কের দুই পাশে যেন সড়কের সঙ্গে পালা করে ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। এদিকে, মাটি সরবরাহের ট্রাকের কারণে ধামরাইয়ের গ্রামগুলোর পাকা-আধাপাকা সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের পাশের ইটভাটাগুলোতে সড়কের পাশেই ইট তৈরির মাটি স্তূপ করে মজুদ করা হয়, অন্যদিকে সারা দিনই মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কগুলোতে সারা দিনই ধুলায় আচ্ছন্ন থাকে।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, যেসব ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

বগুড়ার ধুনটে আইন অমান্য করে ফসলি জমিতে ভাটা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই ইট তৈরি ও পোড়ানো হচ্ছে কাঠ দিয়ে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এ ব্যাপারে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। অপরদিকে ভাটা মালিকরা কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। তবে তারা পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে জনবসতি, ফসলি উর্বর আবাদি জমি এমনকি সংরক্ষিত বন এলাকার ভেতরেও ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে বেআইনিভাবে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি, ফলদ ও বনজ কাঠ। এর ফলে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ হারাচ্ছে তার জীববৈচিত্র্য।

এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি রামপুর এলাকায় ১৩০ ফিট অবৈধভাবে নির্মিত ইটাভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় প্রায় ৩২টি ইটভাটা রয়েছে। ভাটা মালিকরা জানান, গত মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবং বর্তমানে কয়লার মূল্য প্রতি টন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে শুরু করেছেন ইটভাটার শিল্প এই কারখানা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ইটভাটা। অনুমোদনহীন এসব ইটভাটা দিনের পর দিন গ্রাস করে চলছে উর্বর জমি। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন। ভাটার কাজে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ট্রাক ব্যবহার হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘ইটভাটার বিষয়গুলো পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে। এ বিষয়ে নালিশি ক্ষমতাও তাদের। তবে পরিবেশ অধিদফতর চাইলে আমরা অনিয়ম পেলে জরিমানা বা উচ্ছেদ করতে পারি।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফসলি জমি,ইটভাটা,পরিবেশ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close