রাজশাহী ব্যুরো

  ২০ নভেম্বর, ২০১৮

উত্তরে নিউমোনিয়ার প্রকোপ

ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে

রাজশাহী অঞ্চলে বাড়ছে নিউমোনিয়ার প্রকোপ। গত এক সপ্তাহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৭৮ জন শিশু। তবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মৃত্যুরও খবর নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশেষ করে শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। কেবল রামেক হাসপাতালেই গত ১২-১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৭৮ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি। এর বাইরে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে।

জাপান প্রবাসী তরিকুল ইসলামের শিশু সন্তান শাকিল আযাদ সাঈদ। গত ২ নভেম্বর পাঁচ মাসের শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন মা শাকিলা সালওয়া। রাজশাহী নগরীর মোন্নাফের মোড়ের বাসায় স্বজনদের সঙ্গে আনন্দেই কাটছিল শাকিলের দিন। হঠাৎ করেই ১২ নভেম্বর জ্বর এবং এর সঙ্গে থাকে কফ ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয় শাকিলের। ওই দিনই স্বজনরা তাকে রামেক হাসপাতালে নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে শাকিল। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন স্বজনরা। শেষ পর্যন্ত টানা সাত দিন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি থাকার পর ছাড়া পেয়ে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরেছেন শাকিলা।

হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সাত মাস বয়সী গোলাম রসুল। ছয় দিন ধরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে নগরীর উপকণ্ঠ বায়া এলাকার বাসিন্দা রুনা বেগম। তিনি জানান, টানা চিকিৎসা চলছে ছেলের। চিকিৎসক জানিয়েছে, বাচ্চা অনেকটাই সুস্থ। আরেকদিন থেকে যেতে বলছেন। তিন দিন ধরে হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি পাবনার ঈশ্বরদীর দু’মাসের শিশু আল হাসিব। তার নানু মর্জিনা বেগম জানান, কয়েক দিন ধরেই বাচ্চা জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত। অবস্থা বেগতিক দেখে পাবনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে চিকিৎসক সোজা রামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিউমোনিয়া ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। সংক্রমণ এবং এর পরবর্তী প্রদাহ থেকে এ রোগ হয়। সংক্রমণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি দিয়ে। সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। যখন জ্বর এবং এর সঙ্গে থাকে কফ ও শ্বাসকষ্ট, তখনই কেবল শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে বলে ধরা হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে।

শীতে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই নিউমোনিয়া। এ অসুখ বছর ব্যাপী হতে পারে। অজ্ঞতার কারণে নীরব ঘাতক নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যু হতে পারে।

রামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ছানাউল হক বলেন, গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শীতকালে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। কিন্তু এবার শীত আসার আগেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে আসছে।

শীতকালে শিশুকে প্রয়োজনীয় উষ্ণতায় রাখলে নিউমোনিয়া থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে জানান এই অধ্যাপক।

এদিকে, হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, গত ১২ নভেম্বর নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জন শিশু ভর্তি হয় হাসপাতালে। এরপর ১৩ নভেম্বর ১০৯ জন এবং ১৪ নভেম্বর ১১৩ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। ১৫-১৬ নভেম্বর ভর্তি হয়েছে আরো ১৭৭ শিশু। এ ছাড়া ১৭ নভেম্বর ১৩৭ জন এবং ১৮ নভেম্বর ৯৫ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর ভর্তি হয়েছে আরো ৩৮ জন। ৭-১০ দিন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে আক্রান্ত শিশুরা। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শিশু,নিউমোনিয়া,রামেক হাসপাতাল,ঋতু পরিবর্তন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close