এস এম শাহাজামাল, দুর্গাপুর

  ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

খেজুর রসে শীতের আগমনী

পুরনো দিনের গ্রামবাংলার অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবার ও রীতিনীতি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে খেজুর গাছের রস সেই ঐতিহ্যের একটা অংশ হিসেবে টিকে রয়েছে এখনো। ব্যাপক পরিসরে না হলেও সীমিত আকারে প্রত্যেক বছরের শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের।

আশ্বিন মাস প্রায় শেষ। আগমনী বার্তা দিচ্ছে হেমন্ত ঋতু। এই ঋতুবৈচিত্র্যের ধারায় প্রকৃতিতে ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির বিন্দু জড়িয়ে আসছে শীত। এই শীতের সঙ্গে সম্পর্ক খেজুর রসের। তাই হেমন্তকালেই শুরু হয় গাছিদের (যারা খেজুর গাছ কেটে রস নামায়) তোড়জোড়। রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। ইতোমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস নামানোর কাজে নেমে পড়েছেন।

দুর্গাপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে কাঁঠালবাড়িয়া, কুহাড়, মেিহন্দ্র, মাড়িয়া, সায়বাড়সহ পুরো উপজেলাটি রাজশাহীর মধ্যে বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। দুর্গাপুর উপজেলার ৭টি উইনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে প্রায় একলাখের মতো খেজুর গাছ রয়েছে বলে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। তবে আবর্তে খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করে নেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কয়েকদিন পরপর কেটে পরিষ্কার করেন তারা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ কাজে গাছিরা ছ্যান বা বাটাল (স্থানীয় ভাষায়) নামের ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের সঙ্গে থাকে বাঁশ বা বেতের তৈরি পাত্র। যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি।

খেজুর গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়। গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে বাঁশের বানানো দুটি চোখা খুঁটি পোতা হয়। সঙ্গে দড়ি বা সুতা বেঁধে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পাত্রের ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশ টিনের তৈরি নালার মতো ভিন্ন একটি খুঁটি পুঁতে দেওয়া হয় সেই গাছের মাথায় কাটাস্থানে। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুর রস। খেজুর রস বড়ই স্বাদের। শীতের সকালে মানুষ খেজুর রসে মুড়ি মাখিয়ে খায়। গ্রামে গ্রামে চলে খেজুর রসের পায়েস, পিঠা-পুলি তৈরির ধুম। জামাই-মেয়ে ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে বাড়ি বাড়ি চলে শীতের বাহারি পিঠা উৎসব। খেজুর রসে বানানো হয় নালী, দানাদার ও পাটালি গুড়ও।

গাছি আবু সাঈদ, আবদুল করিম, হাসেন, বাক্কার, বকুল জানান, গাছের মাথা হালকাভাবে ছেটে দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে ৪-৫ কেজি হারে রস পাওয়া যায়। সপ্তাহে ৫-৬ দিন রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর ২-১দিন রস সংগ্রহের কাজ বন্ধ রাখা হয়। এতে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়।

গাছিরা জানান, বাণিজ্যিকভাবে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। প্রাকৃতিকভাবেই এসব খেজুর গাছ জন্ম নিয়েছে। পতিত জমি, ভিটা, জমির আইলসহ বিভিন্ন স্থানে এসব খেজুর গাছের দেখা মেলে। একটি সময় এ উপজেলা বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিল। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ খেজুর গাছ কেটে ফেলেছেন বলেও জানান তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মোটামুটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে গাছিরা এই রস সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খেজুর রস,শীত,গাছি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close