রংপুর ব্যুরো

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নগরীর অধিকাংশ রাস্তাই চলাচলের অনুপোযোগী

চরম ভোগান্তিতে রংপুর নগরবাসী

অসহনীয় যানজট, খাল-খন্দে ভরা রাস্তা, অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা সব মিলে রংপুর পরিণত হয়েছে ভোগান্তির নগরীতে। নগরবাসীর অভিযোগ, ক্রমেই নগরীতে বাড়ছে যানজট। অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচোরা ও চলাচলের অনুপোযোগী। অপরদিকে রংপুরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কারে কর্তৃপক্ষের নেই সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা। ফলে নামেমাত্র খাল সংস্কার করা হলেও পরবর্তীতে তা আবার পরিণত হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে।

নগরীতে এখন যানজটই প্রধান সমস্যা। রসিকে ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হলেও যানজট নিরসন হয়নি। বরং সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। এ ছাড়া যত্রতত্র ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অবাধ চলাচল যানজটের প্রধান কারণ।

রসিকের সূত্র মতে, সিটি এলাকায় ৪ হাজার ৮০০ অটোরিকশা লাইসেন্সধারী হলেও চলাচল করছে অন্তত ৪০ হাজার। পাশাপাশি চলছে ৩০ হাজার প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসানোয় যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচোরা ও চলাচলের অনুপোযোগী। রাস্তার চলমান কাজে ধীরগতিতে ভোগান্তি আরো বেড়েছে। নগরের প্রধান সড়কগুলো ছাড়াও শাপলা চত্বর-রেলস্টেশন, শাপলা চত্বর-টার্মিনাল, সুপারমার্কেট-সেনপাড়া-কামারপাড়া, বাস টার্মিনাল-কাছারি বাজার, গণেশপুর-বাবু খাঁ, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড-মাস্টারপাড়া, কামারের মোড়-মীরগঞ্জ, লালবাগ-দর্শনা, তাজহাট-মাহিগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো এখন বেহাল দশা। রসিকের প্রকৌশল শাখা থেকে জানা যায়, রসিকের সড়কের পরিমাণ ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৭২০ কিলোমিটার সড়ক বিগত সময়ে পাকা করা হয়েছে। বাকি ৭২২ কিলোমিটার এখনো কাঁচা।

এদিকে বিলুপ্ত পৌরসভার অন্তর্গত ওয়ার্ডগুলোতে (১৫টি) কিছু পাকা সড়ক থাকলেও বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে তেমন সড়ক নির্মিত হয়নি। বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোর বেশির ভাগ সড়ক এখনো কাঁচা। মহানগরের অন্তর্ভুক্ত হয়েও যোগাযোগসহ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রসিকের বৃহৎ এ জনগোষ্ঠী। ২০নং ওয়ার্ডের মূলাটোল বাজার থেকে কোতোয়ালি থানা হয়ে সুপার মার্কেট পর্যন্ত রাস্তাটির বর্তমানে বেহাল দশা। রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে ওঠেছে। নগরীর এ ব্যস্ততম রাস্তাটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বৃষ্টি এলে এ রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও রংপুর কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক নাজির হোসেন বলেন, নগরীর অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙাচোরা। সিটি করপোরেশনে নাগরিক সুবিধা বাড়াতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নগরীর সব রাস্তার মেরামত কাজ আগে করা উচিত ছিল। কিন্তু রসিক কর্তৃপক্ষ তা করেনি। যার ফলে সমস্যা আরো বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি রসিক মেয়রকে জানানো হয়েছে। রাস্তাটি সংস্কারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে রংপুর সিটির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল শ্যামাসুন্দরী। আর এই শ্যামাসুন্দরী খালই যেন এখন নগরবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। এ খালের দুই পাশ ভরাট করে বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে ওঠায় খালটি এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। আর দখল-দূষণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এক সময়ের স্রোতস্বিনী শ্যামাসুন্দরী। রংপুর শহরের আশীর্বাদপুষ্ট শ্যামাসুন্দরী এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এলজিইডি ২৩ কোটি টাকা ব্যয় করলেও শ্রী ফেরেনি শ্যামাসুন্দরীর।

কখনো কখনো নামে মাত্র সংস্কার করা হলেও সংস্কার কাজের দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই তা আবার ময়লা-আবর্জনায় ভরে ওঠে। এ কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নগরের পয়োনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ স্থানেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

রংপুর শহরের উত্তর-পূর্বদিকে সিওবাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মাহিগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারব্যাপী এ শ্যামাসুন্দরী খাল। ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটি সংস্কার, খালের ওপর সেতু নির্মাণ ও খাল খননের জন্য ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। অল্প কিছুদিন কাজ চলার পর প্রকল্পটি এলজিইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী খালের দুই পাড়ে সিমেন্টের তৈরি বোল্ডার বসানো হয়। এছাড়া খাল খনন ও খালের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এসব কাজ শেষ হয়। কিন্তু কিছু দিন যেতেই খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা শুরু হয়।

নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার একাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবাই শ্যামাসুন্দরীর শ্রী ফেরানোর কথা বলে। কিন্তু এই খালের আজও কোনো উন্নয়ন হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার করার জন্য ইতোমধ্যে কয়েকশত কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এবার শ্যামসুন্দরীর সংস্কার কাজ সুনির্দিস্ট পরিকল্পনা মোতাবেক করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভোগান্তি,রংপুর,জলাবদ্ধতা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close