প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ আগস্ট, ২০১৮

ঈদযাত্রা : দক্ষিণে দুর্ভোগ, উত্তরে স্বস্তি

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট, শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে মেঘনার নরসিংহপুর ফেরিঘাট ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হয়েছে। তবে স্বস্তির এসেছে ঢাকা থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রাপথে। এ রুটে এখনো যানজটের খবর মেলেনি। দায়িত্বশীলরা বলেছেন, এবার এ রুটে যানজট হবে না, কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে নির্মাণাধীন ২৩টি সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

নারায়ণগঞ্জ : রূপগঞ্জের ভুলতায় উড়াল সড়ক নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। ফলে যানজট ও ধুলাবালুতে ঈদযাত্রায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। এ ছাড়া উড়াল সড়কের নিচে সড়কের পাশে বাস, আটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মোল্লা তাসলিম হোসেন বলেন, ভুলতা উড়াল সড়ক নির্মাণকাজের কারণে যানজট নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। তবে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে যাতে ভোগান্তি না পোহাতে হয়, সে জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কুমিল্লা : দাউদকান্দির গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে শহীদনগর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার যানজট ছিল গতকাল। তবে ভোরে গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট থাকলেও দুপুরের পরে কমে আসে।

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ছুটির দিন হওয়ায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। সেইসঙ্গে বেড়েছে পণ্যবাহী যানবাহন। আজ রোববার থেকে মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৩-৪ দিন ধরে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। পাশাপাশি বেড়েছে পণ্যবাহী যানবাহন। ৪ লেনের যানবাহন ২ লেনের সেতুতে চলাচল করায় যানজট হচ্ছে। তবে তা স্থায়ী হচ্ছে না। হাইওয়ে ও থানা পুলিশ যানজট নিসরসনে কাজ করছে।

মানিকগঞ্জ : পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি ও পদ্মা-যমুনায় স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বিঘিœত হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফেরি পারাপারে যাত্রীদের ঘাট এলাকায় এসে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে আরিচা অফিসের বিআইডব্লিউটিসির এজিএম জিল্লুর রহমান জানান, এ নৌরুটে ঈদ উপলক্ষে ২২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হবে।

আরিচা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক অপু জানান, ফেরিগুলো দীর্ঘ দিনের পুরনো। এ কারণে মাঝে-মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। ফেরি বিকল থাকলে যানবাহন কম পারাপার হওয়ায় ঘাট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) থেকে খোরশেদ আলম জানান, কালিয়াকৈর-নবীনগর মহাসড়কে চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে ওয়ালটন পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে সকাল থেকে ধীরগতিতে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে এসব মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।

কোণাবাড়ি হাইওয়ে থানার ওসি বাসুদেব সিনহা জানান, ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঢাকাগামী কুরবানির পশুবাহী ট্রাকের পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনের এই ধীরগতি। পুলিশ যানজট নিরসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল থেকে রেজওয়ান শরিফ জানান, এবারের ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিনে গতকাল ব্যস্ততম এই মহাসড়কে গাড়ির তীব্র চাপ থাকলেও ভোগান্তি ছাড়াই ঘরমুখো মানুষ যাতায়াত করতে পারছেন। মহাসড়কে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহস চলাচল করছে। মহাসড়কে যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১ হাজার সদস্য কাজ করছেন। এ ছাড়াও ভাঙাচোরা অংশ মেরামত, যাত্রী ও চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মহাসড়কটির চার লেনের অনেকাংশ ব্যবহার করতে পাড়ায় যানজটের দুর্ভোগ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে কালিয়াকৈর-চন্দ্রা অংশে যানজটের খবর পাওয়া গেছে। এমনিতেই এই মহাসড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গসহ ২৩টি জেলার ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। ফলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামলাতে সংশ্লিষ্টদের বেগ পেতে হয়।

এ ব্যাপারে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট আজিজুর রহিম তালুকদার বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানবাহন বৃদ্ধি পেলেও যানজট নেই। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘আশা করছি এবার মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছবে। যানজট নিরসনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সড়কে সাদা পোশাকে লোক থাকবে। আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তারাও সর্বদা সহায়তা করবে।

জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজট হয়নি। যানজট নিরসনে তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ কর্মরত রয়েছে। আশা করছি ভোগান্তি ছাড়াই এবার মানুষ নির্বিঘেœ ঘরে ফিরতে পারবে।

মাদারীপুর : ব্যস্ত হয়ে উঠেছে কাঁঠালবাড়ী ঘাট। লঞ্চ-স্পিডবোটে করে যাত্রীরা শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে নামছেন। সকাল থেকেই পদ্মা শান্ত থাকায় লঞ্চে যাত্রীদেরও ভিড় বেশি। নৌরুটে ৮৬টি লঞ্চ ও ২ শতাধিক স্পিডবোট যাত্রী পারাপার করছে।

এদিকে, লৌহজং চ্যানেলমুখে নাব্য সংকট থাকায় গত সপ্তাহ থেকে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। রো-রোসহ বন্ধ রয়েছে ১০টি ফেরি। কে-টাইপ ও মিডিয়ামসহ ছোট ৯টি ফেরি সকাল থেকে চলাচল করছে। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বাড়ছে লঞ্চ ও স্পিডবোটে। শিমুলিয়া ঘাট থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রীরা স্পিডবোট বা লঞ্চে পার হয়ে আসছেন কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। যাত্রীশূন্য গাড়িগুলো পরে ফেরিতে পার করে আনছেন চালকরা।

বিআইডব্লিউটিএর মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী বলেন, নাব্য সংকট নিরসনে চ্যানেলমুখে খননকাজ চলছে। বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম মিয়া বলেন, এখনো ছোট ৯টি ফেরি চলাচল করছে। গতকাল পরীক্ষামূলকভাবে কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে একটি রো-রো ফেরি শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে শিমুলিয়া থেকে ফেরিটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আসতে পারেনি। আশা করা যায় আজ রোববার ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।

বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ী লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আক্তার হোসেন বলেন, সকাল থেকেই ঘাটে যাত্রীদের ভিড় ছিল। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় লঞ্চে যাত্রীদের চাপ বেশি। তবে লঞ্চঘাটে যাতে যাত্রীদের ভোগান্তি না হয় সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রেখেছি।

রাজবাড়ী : দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে ৫ কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় চার শতাধিক গরু বহনকারী ট্রাকসহ যাত্রীবাহী বাস আটকা পড়েছে। চরম দুর্ভোগের শিকার হন বাসযাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীরা। গতকাল বিকেল ৪টার দিকেও ঘাটে শ শ যানবাহন আটকে ছিল।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও তীব্র স্রোতের কারণে নদী পারের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবং সবগুলো ফেরি সচল থাকলে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও পশুবোঝাই যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।

পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, ঘাট এলাকায় যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন সে জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী জানান, ঈদে ঘরমুখো ও ঈদ শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষের যাত্রা নিশ্চিতে ঘাট এলাকায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের আগের ৭ দিন ও পরের ৭ দিনসহ মোট ১৫ দিন ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদযাত্রা,ভোগান্তি,উত্তর,দক্ষিণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close