মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ১৮ আগস্ট, ২০১৮

কোরবানির মাংস পাবেন প্রত্যেক রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এবারের কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে জাঁকজমকভাবে। রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে জুটছে চাহিদা অনুযায়ী, কোরবানির গরুর মাংস। তাই রোহিঙ্গারা কোরবানির ঈদকে বরণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশাসন রোহিঙ্গাদের মাঝে সুষ্ঠু ও মাংস সমবণ্টন নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন।

অপরদিকে, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে কোরবানির মাংস বিতরণের প্রশাসনিক উদ্যোগের বাইরেও কিছু কিছু এনজিও সংস্থা ও একটি দালাল চক্র বিচ্ছিন্নভাবে মাংস বিতরণের তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই চক্র রোহিঙ্গাদের মাঝে গরুর মাংস বিতরণের নামে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে সরকারের সুশৃঙ্খল উদ্যোগে বিঘ্ন ঘটানোর পাশাপাশি ওই চক্র নিজেদের স্বার্থ ও আর্থিক ফায়দা লোটার কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে সচেতন মহল অভিযোগ করেছে।

কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ নিয়ে নিজেদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নাগরিক শফিক আহমদ ও ছখিনা খাতুনসহ অনেকে জানান, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করতে চান এবং চাহিদা অনুযায়ী, কোরবানির মাংস পেলে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে খেতে পারবেন। এতে অন্তত ঈদ উদ্যাপনের মতো আনন্দ একটু হলেও পাবে বলে আশা তাদের।

বাংলাদেশে ঈদ উদযাপন নিয়ে কথা হয় রোহিঙ্গা নবী হোছন ও বেলাল আহমদের সঙ্গে। তারা বলেন, গত বছর ঠিক এই সময় নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বাংলাদেশে। গত কোরবানির ঈদ কেটেছে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে পথে ঘাটে। ‘মাংস তো দূরের কথা ঠিক মতো ঈদের নামাজটাও আদায় করতে পারিনি। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় হলেও সামনের কোরবানির ঈদ ঠিকভাবে করতে পারব কি না তা নিয়ে নানা চিন্তায় আছি।’

কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, প্রশাসনিকভাবে প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারকে মাংস দেওয়ার কথা হয়েছে। রোহিঙ্গারা তো আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। তবে কেউ কোরবানি করছে কি না সে ব্যাপারে তিনি পরিষ্কারভাবে জানাতে পারেনি।

ইতিপূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তি ও দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত মেগা ক্যাম্প কুতুপালং রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছিল। তবে পুরাতন ও নতুন আশ্রিত ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গার কীভাবে এনজিও ও দাতা সংস্থা মাংস বিতরণ ব্যবস্থপনা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। এ পর্যন্ত ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ কোরবানির ঈদ নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা গণমাধ্যমকে জানায়নি।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন জানান, গত ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদা অনুযায়ী, গরু, মহিষ, ছাগলসহ ২০ হাজার মাংসের প্যাকেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এসব দেখভালের জন্য উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ক্যাম্প প্রশাসন, ওসি ও জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি থাকবে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাঝে ব্যক্তি, এনজিও এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে এসব গরু দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রাও গরুর মাংস পাবেন বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের বলেন, উখিয়া থানা পুলিশ কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও এবং দানশীল ব্যক্তিদের প্রদানকৃত মাংস শৃঙ্খলার মাধ্যমে বিতরণে সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোরবানির মাংস,রোহিঙ্গা,কক্সবাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close