মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর)
৮ দিন পর মায়ের কোলে ফিরলো রেখে যাওয়া শিশুটি
তাড়াতাড়ি ছবি তোল, আমি বাড়ি যাবো। আম্মু আছে, আব্বু আছে, আমি তাদের সাথে বাড়ি যাবো। তর যেন সইছে না, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে উদ্ধার হওয়া বিলকিছ (৫) নামের সেই শিশুর। এক সপ্তাহ হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের হেফাজতে থাকার পর শনিবার রাতেই মায়ের সাথে বাড়ি ফিরলো শিশুটি।
শনিবার রাতে বিলকিছের বাবা আবুল বাশার ওরফে বাদশা ড্রাইভার, ইউপি সদস্য মো. আবুল বাসার ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিথিতিকে তার মা মায়া বেগমের কাছে হস্তান্তর করেন থানা অফিসার ইনচার্জ মো. জাবেদুল ইসলাম। বাবা ও মায়ের লিখিত অঙ্গিকারবদ্ধ হওয়ার পরই শিশুটিকে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর পূর্বে গত ১৪ জুলাই শনিবার বিকালে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়ার কথা বলে বিলকিছের মা মায়া বেগম হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের সামনে তাকে রেখে পালিয়ে যায়। সে হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেতয়িাপাড়া গ্রামের আবুল বাশার ওরফে বাদশা ড্রাইভার এবং রাজশাহী জেলার পুটিয়া থানার বানেশ্বর (ঠান্ডারপাড়া) গ্রামের মোসা. মায়া বেগমের মেয়ে।
জানা যায়, বিলকিছের মা স্বামী পরিত্যক্তা। তার মা জন্মের ১৮ দিন পর বাবার বাড়ি (হাজীগঞ্জ) থেকে তাকে নিয়ে নানার বাড়ি রাজশাহী জেলার পুটিয়া থানার বানেশ্ব গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে আর্থ-সামাজিক অবস্থা দূর্বলতার কারনে গত ১৪ জুলাই (শনিবার) হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের সামনে বিলকিছকে রেখে তার মা (মায়া বেগম) পালিয়ে যায়।
থানা সূত্রে জানা যায়, ১৪ জুলাই শিশুটিকে উদ্ধার করার পর, তার কাছ থেকে মা, নানা, মামা এবং গ্রামের নাম বানেশ^র ছাড়া আর কিছুই জানা যায়নি। এ তথ্য দিয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশসহ ওই জেলার বিশ^বিদ্যালয়, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের দায়িত্বরত, এবং বানেশ্বর ইউনিয়ন ও গ্রামের নামে যতগুলো ফেসবুক আইডি পাওয়া গেছে সবাইকে তথ্য দেয়া হয়েছে।
পরে বিলকিছের ছবি ও তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই শিশুটির চাচাতো খালা, তার চাচাতো বোনের মেয়ে বলে চিহিৃত করেন। এরপরেই শিশুটির পরিচয় চিহিৃত করা হয় এবং শনিবার সন্ধ্যায় তার মা রাজশাহী থেকে হাজীগঞ্জ আসলে, বাবা এবং ইউপি সদস্য ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তারা উভয় (মা এবং বাবা) থানায় লিখিত অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়ার পর শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে শিশুকে হস্তান্তরকালে থানা অফিসার ইনচার্জ মো. জাবেদুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি শিশুটির বাবা এবং মাকে দিয়ে বলেন, শিশুটির পড়ালেখাসহ যে কোন সমস্যায় তাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি আর্থিক সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, মা স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার কারনে শিশুটি বাবাকে চিনেনা এবং বাবার সাথে যেতে চায়না। তাই শিশুটির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে মায়ের কাছে দিয়ে দেয়া হয়। মায়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি তার কাছে থাকবে। বাবা শিশুটির খরছ বাবদ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা প্রতি মাসে দিবে এবং মায়ের বিয়ে হলে শিশুটিকে বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে তারা উভয় লিখিত অঙ্গিকার করে।
পিডিএসও/তাজ