রাজশাহী প্রতিনিধি

  ২৪ জুন, ২০১৮

রাসিকের পাড়া-মহল্লায় সোচ্চার হচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা, আসছেন নতুন মুখ

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি নগরীর পাড়া-মহল্লায় এখন সোচ্চার হচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে নগরীর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দুই শতাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে এবারের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিন থেকে চারশ’ জন প্রার্থী হবেন কাউন্সিলর পদে। তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরায় জাগিয়ে তুলেছেন পাড়া-মহল্লা। পুরাতনদের পাশাপাশি নতুনরাও আসছেন এ তালিকায়। আছেন বিতর্কিতরাও। সবমিলিয়ে রাজশাহী নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের অলিগলিতে প্রচারে নেমেছেন তারা। যোগাযোগ রাখছেন ভোটারদের সঙ্গে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপিপন্থী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচিত হন। ওই সময় কাউন্সিলর পদেও সিংহভাগ নির্বাচিত হন বিএনপিপন্থীরা। তবে মেয়রের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলররা গত ৫ বছর ছিলেন অন্তরালে। হাতেগোনা কয়েকজন কাউন্সিলর এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখলেও বেশীর ভাগ কাউন্সিলরের টিকিও ছুতে পারেন নি নাগরিকরা। এবার তারাও নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। তারাও আবার ভোটারদের দারস্থ হচ্ছেন। আবারো দোয়া চাচ্ছেন, ভোট প্রার্থণা করছেন। তবে নগরবাসী নাখোস গতবারের নির্বাচিত বেশীরভাগ কাউন্সিলরদের প্রতি।

জানা যায়, গত নির্বাচনে রাজশাহী নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্ততঃ ২৫টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর নির্বাচিত হন বিএনপিপন্থীরা। নির্বাচনের আগে নানান উন্নয়ন প্রতিশ্র“তি দিলেও তারা মুলত কোনো কাজই করতে পারেনি গত ৫ বছরে। তবে হাতে গোনা কয়েকজন কাউন্সিলর ছিলেন সোচ্চার। তারা এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।

গত ৫ বছরে কাজের পরিবেশ ছিলো না বলে দাবি করে বিএনপিপন্থীরা নিজেদের দায় এড়িয়ে গেলেও নগরবাসীর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের প্রতি। নগরবাসীর অভিযোগ, গত নির্বাচনে জয়ি কাউন্সিলররা এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসেন নি। গত ৫ বছরে সামান্য মশা মারা তো দুরের কথা তাদের দেখাও মেলে নি। অনেক কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলে নি দীর্ঘ সময়। ২০১৩ সালের পর থেকে নগর ভবনের মতো ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কার্যালয়গুলো ছিলো কাউন্সিলর শূন্য। কোনোমতে একজন সচিব চালিয়েছেন এসব অফিস। সেখান থেকে নাগরিক সেবা বলতে শুধুমাত্র নাগরিক সনদপত্র, জন্মনিবন্ধন কার্ড পেয়েছেন।

গতবার নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন নিযামুল আজিম নিজাম। পরে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের অনুপস্থিতিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ সময়। তবে কাজের কাজ করেননি নিজ ওয়ার্ডের।

নগরীর মূলটাউন বলে পরিচিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গতবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপিপন্থী ইকবাল হোসেন দিলদার। গত ৫ বছরে এলাবাবাসী তাকে খুজেই পায়নি। এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু। এবারো তিনি কাউন্সিলর প্রাথী হবেন। সরিফুল ইসলাম বাবু জানান, গত নির্বাচনের পর থমকে যায় পুরো রাজশাহী নগরীর উন্নয়ন। টানা ৫ বছর এলাকাবাসী কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা পায়নি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে। তিনি বলেন, নাগরিকদের অনেকে তার কাছে অভিযোগ করেছেন, কাউন্সিলরকে তারা খুজেই পাননি। তারমতো নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন নিস্ক্রীয়। অনেকেই ছিলেন অন্তরালে, ধরাছোয়ার বাইরে। এলাকার উন্নয়নে কোনো অবদান রাখতে পারেন নি তারা। অথচ এবারো তারা প্রার্থী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।

এ অবস্থায় পুরনোদের পাল্লা দিয়ে এবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নতুনদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। নতুন প্রার্থীরা বলছেন, গত ৫ বছরে রাজশাহীবাসী কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কোনো সেবা পাননি। তাই তাদের আবার প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নেই। এ কারণে নতুনরা আসছেন। রাজশাহী নগরীর হাতে গোনো কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সির গত নির্বাচনের পর থেকেই ছিলেন সক্রিয়। এরমধ্যে একজন নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু। তিনি এলাকায় নাগরিক সেবা দিয়েছেন। গত ৫ বছরে পরিচ্ছন্ন ওয়ার্ড গড়েছেন। সব ধরনের নাগরিক সেবাও পেয়েছেন ওয়ার্ডবাসী।

কামরুজ্জামান কামরু বলেন, গত ৫ বছরে নানা প্রতিকুলতায় তাকে কাজ করতে হয়েছে। তবে এলাকার উন্নয়নে, নাগরিক সেবা প্রদানে একটুকুও পিছপা হননি। তার কার্যালয় নিয়মিত খোলা থাকে। নাগরিকরা আসেন। সমস্যা সমাধান করেন। নিজে দাড়িয়ে ড্রেন পরিস্কার করেন। শুধু তাই নয়, পুরো নগরীতে যখন মশা মারার ফগার চলেনি তখন নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ প্রচেষ্টায় মশা নিধন করেছেন কামরু। তিনি বলেন, জনগনের সঙ্গে কমিটমেন্ট করে নির্বাচিত হয়েছিলে। তাই তিনি প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেছেন। আগামীতেও করবেন। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত নির্বাচনের পর রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন পরিষদের নিয়মিত সভাগুলোতেও আসতেন না কাউন্সিলররা। তাদের অনুপস্থিতিতেই নেয়া হতো নানা সিদ্ধান্ত। এ কারণে গত ৫ বছরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ‘বুলবুল পরিষদ’ অবদান রাখতে পারেন নি নগর উন্নয়নে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, গত ৫ বছর কিভাবে নগরসংস্থা চলেছে, তা কেউ জানে না। কাউন্সিলররা ছিলেন না নগরভবন মূখি। সবসময় ছিলো ভুতুড়ে পরিবেশ। এমনকি সাধারণ সভাগুলোতেও অনুপস্থিত থাকতেন বেশীর ভাগ কাউন্সিলর।

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অবস্থাও ছিলো একই। তারাও এলাকার উন্নয়নে কোনো অবদান রাখতে পারেন নি। নগরীর সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ড সপুরা এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত ৫ বছরে সাধারণ কাউন্সিলকে তো পাওয়া যায় নি। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের দেখা মিলেনি। তবে এ ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক চা দোকানি বলেন, এবার ঈদের আগের দিন সেমাই আর চিনি বিতরণ করেছেন এ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর সামশুন্নাহার।

নগরীর সংরক্ষিত ৩ আসনের কাউন্সির মোসলেমা খাতুন বেলী জানান, তিনি পর পর দুইবারের কাউন্সিলর। বিএনপিপন্থী এ নারী কাউন্সিলর প্রথমবার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে এলাকার অনেক উন্নয়নমুলক কাজ করলেও পরবর্তিতে নির্বাচিত হয়ে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে এলাকার কোনো উন্নয়ন কাজই করতে পারেন নি। তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়নে সড়ক সংস্কার কাজের টেন্ডার হলেও ঠিকাদার কাজ করেন নি। কাজ করে টাকা পাবেন না এ ভয়ে ঠিকাদার কাজেই হাত দেননি। তবে এবার নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখার চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। রাজশাহী সিটিতে এবারো ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি। এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ভোট হচ্ছে। মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কাউন্সিলর প্রার্থী,পাড়া-মহল্লা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist