গাজীপুর প্রতিনিধি

  ১৮ জুন, ২০১৮

ঈদে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়

ভাবুন তো আপনি মিনিবাস করে যাচ্ছেন। বাসের আরেক যাত্রী হঠাৎ বলে উঠল ঐ যে সিংহ। দেখলেন উন্মুক্ত একটা সিংহ আপনার বাস থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরে। আর সিংহীতো একবারে বাসের কাছে। শুধু সিংহ নয়, বাঘ ভাল্লুকসহ ভয়ংকর সব জীবজন্ত আপনার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে।

এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আপনি দেশেই নিতে পারেন। এই স্বাদ আপনি নিতে পারবেন গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে। ভয়ংকর সব জীবজন্ত আপনার চারপাশে ঘোরাফেরা করলেও ভয় পাওয়ার কারণ নেই, আপনি যে বাসে আছেন এটি সুরক্ষিত। আর পার্কে আসা দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণও থাকে কোর সাফারি পার্কের বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ ইত্যাদি প্রাণী গুলো দেখা।

ঈদের ছুটিতে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভীড় জমিয়েছেন এ সাফারি পার্কে। ঈদের পরদিন রোববারও ছিল পার্কে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম। কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের দিন ১০ হাজারের মতো দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছিল। আর আজ পার্কে আনুমানিক ২০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। যা ঈদের দিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন।

সরজমিনে দেখা গেছে, দর্শনাথীরা বেশি ভীড় ছিল কোর সাফারি পার্কে। কোর সাফারি পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভেতর উন্মুক্তভাবে বিচরণ করে। এসব প্রাণী দেখতে দর্শনার্থীদের পার্কের নির্ধারিত মিনিবাসে চড়ে যেতে হয়। যার কারণে এ অংশ দেখতে সুষ্টি হয় দর্শনার্থীদের লম্বা লাইনের। প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থানকালে দেখা গেছে লাইনে ১০০০/১২০০ দর্শণার্থীকে অপেক্ষা করতে।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোতালেব হোসেন জানান, ঈদের দিন ১০ হাজারের দর্শনার্থীর হয়েছিল। আজ পার্কে আনুমানিক ২০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে। যা ঈদের দিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। তিনি আরো জানান, দর্শনার্থীদের কোর সাফারি পার্ক দেখার জন্য এখন আটটি মিনিবাস রয়েছে। প্রতিটি মিনিবাসে গড়ে ৩০জন যাত্রী যেতে পারেন। আর বাসে কোর সাফারি দেখতে প্রায় ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগে। তিনি বলেন, কোর সাফারি পার্কে লিমিটেশনের মধ্যেই গাড়ি চলাচল করাতে হবে। কারণ বেশি গাড়ি হলে, সেখানে চলাচলে অসুবিধা হবে।

পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মো: আনিসুর রহমান জানান, কোর সাফারি দেখতে হয় গাড়িতে করে। এখানে গাড়ির আসন অনুযায়ী দর্শনার্থী সুযোগ পান। ফলে লোক সমাগম বেশি হলে পার্কে এ অংশে দর্শণার্থীদের অপেক্ষা করতে হয়। অন্য অংশে লোক সমাগম বেশি হলেও সমস্যা হয় না।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কটি ৫টি অংশে বিভক্ত। সেগুলো হলো- কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। ছুটির বিশেষ দিনগুলো ছাড়া এ পার্কে স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। বাঘ, সিংহ ছাড়াও পার্কে রয়েছে ময়ূর, ধনেশ, ক্রাউন্ট ফিজেন্টসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখির পাখিশালা, প্রজাপতি কর্ণার, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, মেরিন একুরিয়াম, ইমু গার্ডেন, ময়ুর/মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, লেকজোন ও কুমির পার্ক।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার পাতবরাইল থেকে মো: ইউসুফ আলী, সুজন শিকদার, সজিব মোল্লা ও সাগর শিকদার চার বন্ধু মিলে রোববার আসেন সাফারি পার্ক দেখতে। কোর সাফারির গেটে কথা হয় তাদের সঙ্গে, তারা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে রওনা হয়ে ১টার দিকে সাফারি পার্কে পৌছেন। এবাই তারা প্রথম এসেছেন। প্রথমে তারা কোর সাফারি দেখার জন্য লাইনে দাড়িয়ে যান। প্রায় দুই ঘন্টা পর সুযোগ মিলে। তারা জানান, বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা ইত্যাদি দেখতে পেরেছেন। এতে তারা খুব খুশি। তারা জানান, এখন যাবেন সাফারি কিংডম।

গাজীপুরের শ্রীপুরের বাজার এলাকার মামুনুর রশিদ এসেছেন মা, ভাই-ভাবী এবং তাদের দুই সন্তান নিয়ে। তিনি জানান, ১২টার দিকে সাফারি পার্কে এসে পৌছেন। এসেই দেখে কোর সাফারি পার্কের সামনে লম্বা লাইন। পরে পার্কের অন্যান্য অংশ ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, তখন থেকে বিকেল ৩টা অব্দি মাঝে মধ্যে এসে দেখেছি লাইন যেন ছোট হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোর সাফারি অংশ দেখতে আরো প্রায় দুই ঘন্টা লাগবে। আরেক দিন এসে এ অংশ দেখব।

তক্ষক অবমুক্ত : রোববার বিকেলে সাফারি পার্কের উন্মুক্ত পরিবেশে একটি তক্ষক উন্মুক্ত করা হয়। এসময় পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোতালেব হোসেন, র‌্যাব- ১ গাজীপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডর মোহাম্মদ মহিউল ইসলাম, পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মো: আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে,উপচেপড়া ভীড়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist