কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
নামেই মহিলা মার্কেট!
২২ দোকানের ১৮টি চালাচ্ছেন পুরুষরা
নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে আর্থিক উন্নয়নের জন্য কলাপাড়ার তিনটি হাট-বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটগুলো এখন পুরুষদের দখলে। শুরু থেকেই নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দোকান বরাদ্দ দেয়ায় এবং এলজিইডি বিভাগের তদারকি না থাকায় তিনটি মার্কেটের ২২টি দোকানের ১৮টি বেদখল হয়ে গেছে। অভিজ্ঞরা মনে করছেন এ কারণে ভেস্তে গেছে সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
কলাপাড়া পৌর শহরের নতুন বাজারে ১০ কক্ষের, লালুয়ার বানাতি বাজারে ৬ কক্ষের ও মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজারে ৬ কক্ষের মোট তিনটি মহিলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মার্কেট তিনটি নির্মাণ করে। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময় মার্কেটগুলো চালু করা হয়।
দোকান বরাদ্ধের নীতিমালানুযায়ী, বাজারে দোকান রয়েছে কিন্তু মানসম্মত নয়, নিজেই দোকান চালান এমন মহিলা, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সদস্য, মহিলা নিজের বাড়িতে দোকান করেন, উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা, পরিবার প্রধান মহিলা যিনি ব্যবসা করতে আগ্রহী, অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত, মহিলাদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা রয়েছে। নীতিমালায় আরো রয়েছে, প্রতিটি দোকানঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত মহিলা ছাড়া কোন পুরুষ পরিচালনা করতে পারবে না। উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি দোকানের প্রতি বর্গফুট হিসাবে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। প্রাপ্ত ভাড়ার শতকরা পাঁচ ভাগ সরকারকে ৭-ভূমি রাজস্ব খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। ১৫ ভাগ মহিলা মার্কেটের রক্ষণা-বেক্ষণে ব্যয় হবে। বাকি ৮০ ভাগ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌর পরিষদের তহবিলে জমা হবে। কোনভাবেই বরাদ্দ পাওয়া মহিলা এ দোকান অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। অপরদিকে, মার্কেটগুলো রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য নীতিমালায় সবকিছু উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এসবের কিছুই নেই। নারীদের স্বাবলম্বী করার সরকারের এ উদ্যোগ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের চরম উদাসীনতায় মার্কেট তিনটির দোকানগুলো নারীদের কাছ থেকে বেহাত হয়ে গিয়েছে।
কলাপাড়া পৌর শহরের নতুন বাজারে দুই দিকে মুখ করা ১০ কক্ষের মার্কেটটিতে ১০জন মহিলার নামে কাগজে-কলমে বরাদ্দ দেয়া রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুধুমাত্র একটি দোকান বরাদ্দকৃতরা পরিচালনা করছে। বাকিসব পুরুষ লোকজন চালাচ্ছে। যার মধ্যে অধিকাংশ দোকানগুলো অপেশাদারী একশ্রেণির প্রভাবশালী তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে সাবলেট দিয়েছে। এমনকি লোহা-লক্করের দোকান পর্যন্ত বসানো হয়েছে। ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে মহিলা মার্কেট কথাটি পর্যন্ত লেখা নেই। মার্কেটের পাশের টয়লেটটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। টয়লেটের ট্যাংকির ওপরে তোলা হয়েছে স্থাপনা। এমনকি মার্কেটটির দক্ষিণ দিকে তোলা হচ্ছে বারন্দা ঘেঁেষ স্থাপনা। একজন দোকানি জানালেন, শুরুতে দোকান ভাড়া দুই শ’ টাকা নির্ধারণ করা ছিল। যা বর্তমানে পাঁচ শ’ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু মেরামতসহ কোন কাজ করা হয় না।
বানাতি বাজারে দুই মহিলা কখনও কখনও দোকান করেন। তেগাছিয়া বাজারের একটি দোকানও মহিলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে নামে মাত্র ভাড়ায় নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে করা সরকারের নেয়া উদ্যোগ এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। এক ইউপি মেম্বার জানালেন, এ মার্কেট মহিলাদের নামে আছে কামে নাই। অনেক মহিলাদের অভিযোগ, তাঁরা সেলাইসহ ক্ষুদে দোকান পরিচালনা করছেন। কিন্তু তাদের নিজস্ব দোকানপাট নেই। ওইসব নারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতো। আবার অনেক প্রশিক্ষিত মহিলা রয়েছেন যাদেরকে ওই কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতো।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান জানান, দু’একজন মহিলা দোকান করছেন। তবে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে হবে। এলজিইডির কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জানান, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
পিডিএসও/রানা