মাজহারুল ইসলাম মিশু, হালুয়াঘাট
হালুয়াঘাটে জমজমাট শ্রমিকের হাট
১ মন ধানের মূল্যে পাওয়া যায় না একজন শ্রমিক
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বোর ফসল ঘরে তুলতে প্রতি মৌসুমের ন্যায় এবারও উপজেলার ধারা বাজার বাসট্যান্ডে কাক ডাকা ভোরে জড়ো হন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ছুটে আসা ধান কাটার শত শত শ্রমিক। গৃহস্থ আর শ্রমিকের দর কষাকষির মাধ্যমে চলে এর হাকডাক। মজুরি নির্ধারণ শেষে চলে যেতে হয় মাঠে। সকাল ছয়টা থেকে স্বল্প পরিসরে চলে শ্রম বাজারের দর কষাকষি। অথচ জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরী ৭ শত টাকা মন প্রতি ভাল ধানের মূল্য ৪ শত ৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতিবারের ন্যায় এবার মজুরি বেশ চড়া। বিরুপ আবহাওয়ার ফলেই মজুরি ওঠানামা করে। ফসল কাটার শুরুর দিক থেকে ৫ শত টাকার মজুরি বেড়ে দাড়িয়েছে ৭ শত ৫০ টাকায়। শ্রমের মূল্য বেশি থাকায় পেশাদার শ্রমিকদের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া কিশোররা শ্রম বিক্রি করতে এখানে আসছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হয়েছে শ্রমিক হাটে। উপজেলার কৈচাপুর গ্রামের গ্রামের শ্রমিক আব্দুল মালেক (৫৫) জানান, গৃহস্থ তাদের সাধ্যমতো কাজ করাতে চায়। রক্তচোষা জোক আর ক্ষেতে জমে থাকা পঁচা পানিতে দাঁড়িয়ে থেকে ধান কাটার কাজ করতে হয়। অপর এক শ্রমিক শরাফ উদ্দিন (৪৫) বলেন, ‘ভাই আমরা গরীব মানুষ। ৫ সদস্যের অভাবের সংসার দিন এনে দিন খাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা কাজে থাকতে হয়। তাই বাড়িতে অলস বসে না থেকে কাজের জন্য ছুটে এসেছি। কষ্ট অনুযায়ী মজুরি নেই।
হাটে শ্রমিক নিতে আসা ধুরাইল ইউনিয়নের চরণদর গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, প্রায় ৩ একর জমিতে ২৮ জাতের ধান করেছিলাম রোগে সব নষ্ট হইছে। শুকনো খড়সহ ধান ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে পানিতে ভাসছে। নিজের এলাকাতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় ৭ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি শ্রমিক নেওয়ার উদ্দেশ্যে। দর দাম যায় থাকুক আজকের মধ্যে ধান কাটতেই হবে। কয়রাহাটি গ্রামের দুলাল হোসেন জানান, কষ্টের ফসলে ধানের নায্য মূল্য নাই। মহাজনরা ভিজা ধান নিতে চায়না। যে ধান পাই সেগুলো বিক্রি করলে শ্রমিকের বেতন দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। ধানের বাজারে এই অবস্থা থাকলে ফসল বাবদ ঋণের ওপর ঋণ করতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে উফশী জাতের ধান ১৫ হাজার ১ শত ৬৫ হেক্টর এবং হাইব্রীড জাতের ৫ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। বোরো আবাদে প্রায় ৪০ ভাগ ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপন করা হয়েছে।
পিডিএসও/রিহাব