মোঃ নাজমুল সাঈদ সোহেল, চকরিয়া

  ০২ মে, ২০১৮

কবে হবে চকরিয়ার দ্বিতীয় মাতামুহুরী ব্রিজ?

`ওলট-পালট করে দেয় মা- লুটে পুটে খাই-এ যেন আল্লাহ্ ছাড়া দেখার কেউ নাই' কয়টা লাশ পড়লে, কতো জন নিহত হবার বিনিময়ে চকরিয়াবাসী একটি ব্রিজ পাবে? এই ব্রিজ কি শুধুমাত্র চকরিয়াবাসীর জন্য প্রযোজ্য? যখন পড়বে লাশ, যখন স্বজনের চিৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হবে মরা মানুষের দুর্গন্ধে এক ঝাঁক কাকের কাঁ কাঁ শব্দে স্তব্দ হয়ে যাবে চকরিয়া তথা কক্সবাজারের মেঠো পথ- তখন হয়তো টনক নড়বে বড় কর্তাদের!

চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে ১৯৬০ সালে নির্মিত গার্ডার ব্রিজটি চকরিয়া উপজেলায় চিরিঙ্গা মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ‘দি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামে জাপানি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় চার বছর ধরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উম্মুক্ত করে দেয়। সেই থেকে অদ্যাবধি এই সেতুর দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘ ৫৮ বছর আগে নির্মিত ব্রিজের উপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত চলছে হাজার হাজার পণ্য ও যাত্রী বোঝাই গাড়ি। যে কোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। ব্রিজের ছাদের নীচে ধরেছে ফাটল।

বলতে গেলে অনেকটা মাতামুহুরী নদীর ব্রিজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়ার কতিপয় অলস কর্মচারীদের "ঘুমভাঙ্গানো কামান্যাপুত"। কারণ হিসাবে জানা যায়, সড়ক কর্মচারিদের টাকার প্রয়োজন দেখা দিলেই এ ব্রিজে চলে ব্যান্ডিজকর্ম। আবার নতুন কোন ঠিকাদারের ইন্টানির প্রয়োজন হলে জোড়াতালি দিয়ে এটির ব্যবহার হয় ঠিকাদারী শেখানোর আঁতুড় ঘর হিসাবে। মালম্যাটারিয়াল সরকারি খরচে হয় তবে বিল ভাওচার হয় একে তিন অর্থাৎ লাখে তিন লাখ। ইমার্জেন্সি খাতের নামে বিল করে চলে ভাগবাটোয়ারা। স্থায়ী মেরামতে নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি। প্রচার রয়েছে এর মেরামত ব্যয় থেকে উঠে আসে কতিপয় কর্মচারীর ইমার্জেন্সী বোনাস। তাই মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজারের প্রবেশদ্বারের এ ব্রিজটি এখন "সওজ' (সড়ক ও জনপথ) বিভাগের চকরিয়া অফিসের অলস কর্মচারীদের "ঘুমভাঙ্গানো কামান্যাপুত" বা দুধের গাই' হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেও এই "পুতের এখন করুন দশা চলছে। ভারবহনে অক্ষমতা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করছে এ ব্রিজ। যে কোনো মুহুর্তে এ ব্রিজ উপহার দিতে পারে বিগত দিনের মত লাশের মিছিল। ভেঙ্গে তলিয়ে যেতে পারে যাত্রীবাহী বা পর্যটকবাহী গাড়ি।

সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারীরা বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। দিনের বেলায় তেমন সমস্যা না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার বাসগুলো সেতুটি পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অতিদ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জোর দাবি জানান তারা। অন্যথায় যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। গত চার বছর ধরে সেতুটির এই দুরবস্থার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ইতোপূর্বে দূরপাল্লার একটি পিকনিক বাস দেবে যাওয়া অংশ দিয়ে পারাপারের সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয় বাসটি। এতে একসাথে ২০ জনের মতো নারী-পুরুষ প্রাণ হারান এবং আহত হন অনেকে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্র ঝুঁকি এড়াতে সেতুর নিচে মাটির ওপর থেকে গার্ডারের তলানী পর্যন্ত বালুর বস্তা দেয়া হয়েছে। বালুর বস্তার চারদিকে ইটের গাঁথুনি দেয়া হয়েছে যাতে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে। এ ছাড়াও সেতুর উপর দিয়ে যাতে ১০ টন ওজনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারে সে জন্য সেতুর দুই দিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে সেতুর মাঝখানে আবারো দেবে যাওয়া শুরু হয়। দেবে যাওয়ার অংশের ওপর ইতোপূর্বে বসানো পাটাতনগুলো সরে যায়। এ অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্যস্ততম এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ায়।

তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে সরে যাওয়া পাটাতনগুলো নতুন করে কয়েকবার বসানো হয়েছে এবং সেতুর গার্ডারের নিচে বালুভর্তি বস্তা দেয়া হয়। বালুর বস্তার চারদিকে ইট দিয়ে গাঁথুনি দেয়া হয় যাতে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে।

তাহলে স্থায়ী সমাধান কখন হবে, এমন প্রশ্নে কক্সবাজার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যতটুকু জানি, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি চারলেনের সড়কে উন্নীত করার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছ এবং মাতামুহুরী নদীর ওপরও চারলেনের সেতু হবে। এ কারণে এখনই নতুন কোনো সেতু নির্মাণ হচ্ছে না।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চকরিয়া,মাতামুহুরী ব্রিজ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist