নাঈমুল হাসান, টঙ্গী(গাজীপুর)

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৮

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

প্রতীক পেয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে প্রচারণা শুরু মেয়র প্রার্থীদের

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়। প্রতীক পেয়েই মেয়র প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীরা জনসংযোগে নেমেছেন। এর আগে সকাল থেকেই প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে গাজীপুর নির্বাচন রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অবস্থান নেন।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যান। এর আধ ঘণ্টা পর দলীয় নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম যান। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রথমে মেয়র প্রার্থী পরে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করেন।

মেয়র পদে প্রতীক প্রাপ্তরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো: জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো: জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো: রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক পেয়েছেন। এর মধ্যে ৬ প্রার্থী তাদের দলীয় নির্ধারিত প্রতীক পেয়েছেন। একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তার পছন্দের প্রতীক (টেবিল ঘড়ি) দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই প্রতীকে একাধিক প্রার্থীর পছন্দ থাকলে সেখানে লটারির মাধ্যমে প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়।

বিভিন্ন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের পর রিটানিং কর্মকতার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় শ্লোগান দিতে দেখা যায়। এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম টঙ্গী থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় কার্যালয়ে নেতা কর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

সহকারি রিটার্নিং অফিসার তারিফুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা করতে পারলেও কোনো দালান ও দালানের দেয়াল, বেড়া, যানবাহন, বিদ্যুতের খুঁটি বা গাছে আঠা বা অন্য কোনো পদার্থ দ্বারা পোস্টার লাগানো যাবে না। তবে ভোট কেন্দ্র ব্যতিত নির্বাচনী এলাকার যে কোনো স্থানে পোষ্টার, হ্যান্ডবিল, লিফলেট ঝুলাইতে বা টাঙ্গাতে পারবেন। কোনো অবস্থাতেই রঙ্গিন পোস্টার ছাপানো বা লাগানো যাবে না। পোস্টারে নিজের ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারো ছবি বা প্রতীক ছাপানো যাবে না। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রাজনৈতিক দলের মনোনীত হলে দলীয় প্রধানের ছবি পোষ্টার বা লিফলেটে ছাপাতে পারবেন।

পোষ্টার ৬০ সেন্টিমিটার বাই ৪৫ সেন্টিমিটার সাইজের সাদা-কালো কাগজের পোস্টার দড়ি, সুতলী বা রশি দিয়ে ঝুলিয়ে বা টাঙ্গিয়ে দেয়া যাবে। পোস্টারের যে কোনো স্থানে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, মুদ্রণের তারিখ, পোস্টারের মোট সংখ্যা অবশ্যই থাকতে হবে। নির্বাচনী প্রতীকের আকার দৈর্ঘ্য, প্রস্ত ও উচ্চতা কোনো অবস্থাতেই তিন মিটারের অধিক হতে পারবেনা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, কোনো কোনো প্রার্থী প্রতীক বিতরণের আগে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছেন, যা নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। যাদের এরকম লঙ্ঘনে প্রমাণ পেয়েছি তাদেরকে বিধি অনুযায়ী সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। প্রচারণার ক্ষেত্রেও বিধিমালা রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনদুর্ভোগ যেন সৃষ্টি না হয়, শিক্ষার্থীদের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে তিনি প্রার্থীদের অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড প্রার্থীদের অন্যতম প্রধান একটি চাওয়া। এটি প্রতিষ্ঠা করতে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। এক ওয়ার্ডের মাইক অন্য ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে পারবে না।

নির্বাচনী প্রতীক হাতে পেয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর জনগণের কাছে এখন আমার প্রতীকটি উপস্থাপন করব। প্রতীক নিয়ে ভোটারের কাছে যাব। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রতীক নগরবাসীর মুক্তির প্রতীক। আধুনিক এবং পরিকল্পিত নগর গঠনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাজে শরীক হতে ভোটারদের আহবান জানাবো। নৌকা প্রতীক বিজয়ী হলে গাজীপুর মহানগর হবে দেশের একটি অন্যতম আধুনিক মহানগর ইনশাল্লাহ।

বিএনপি মনোনীত দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ধানের শীষ প্রতীকটি গাজীপুর নগরবাসীর পরিচিত একটি প্রতীক। এ প্রতীক উন্নয়নের প্রতীক। এ প্রতীকে ভোটদানে গাজীপুরবাসী ভুল করবে না। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের প্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাস দমনসহ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সর্বদা কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সকল প্রার্থীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়নে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি এবং কালো টাকার ছড়াছড়ি হলে তা বন্ধ করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত মো. জালাল উদ্দিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গাজীপুর মহানগর একটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিধি অনুযায়ী প্রচারণা চালিয়ে যাবো। জয়ী হলে প্রথমেই ময়লা আবর্জনামুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন মহানগর প্রতিষ্ঠা করব।

২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো: জাকির হোসেন বলেন, তিনি তার ওয়ার্ডকে মানুষের নির্বিঘ্নে বাসযোগ্য ওয়ার্ড গঠনে সচেষ্ট থাকবেন। ২৫,২৬ ২৭ নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী অ্যাডভোকেট শাহনাজ আক্তার বলেন, নির্বাচিত হলে নারী ও শিশুদের জন্য সরকারের দেয়া বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবো।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে ৭ মেয়র, ২৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এতে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও মহিলা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫টি। ভোট কক্ষ ২ হাজার ৭৬১টি।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রতীক,উৎসব মুখর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist