সাভার ও গৌরীপুর প্রতিনিধি

  ২৪ এপ্রিল, ২০১৮

রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর

আজও যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন যারা

দেশের মানুষ এত বড় ভবন ধসের ঘটনা এর আগে কখনো দেখেনি

শরীরে ইট-পাথরের শক্ত আঘাত আর কোমল চামড়ায় লোহার রডের রক্তক্ষরণ আঁচড়। সাভারের রানা প্লাজা ভবনধসের বিভীষিকার এমন আঁধারে কেউ হেরেছেন, কেউ বেঁচে ফিরেছেন। বেঁচে ফেরা হাজারো শ্রমিক, শরীরিক প্রতিবন্ধকতা ও নানা যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকার আরেক জীবনযুদ্ধ পার করছেন।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। সাভারের প্রাণকেন্দ্রের রানা প্লাজার ৯ তলাবিশিষ্ট ভবনে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা প্রবেশ করেন। কিন্তু তারা জানতেন না, কী ভয়াবহ পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুৎ যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই ভবনে থাকা অর্থাৎ সকাল ৮টা ৪৭ মিনিটে একযোগে চালু করা হয় ডজনখানেক জেনারেটর। জেনারেটর চালু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনটি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান ১১৩৪ জন শ্রমিক এবং আহত হন কমপক্ষে আরো ২ হাজার ৪৩৮ জন।

দেশের মানুষ এত বড় ভবন ধসের ঘটনা এর আগে কখনো দেখেনি। ভবনধসের ৫ বছর অতিক্রম হলেও অনেক নিহত শ্রমিকের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা পাননি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। এখনো অনেক আহত শ্রমিক ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। তবে কয়েকজন এরই মধ্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। অনেকেই মুদিদোকান দিয়ে জীবন চালাচ্ছেন।

হতভাগা শ্রমিক নিলুফা বেগম : রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এখন তিনি পঙ্গু; চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য মাত্র তিন লাখ টাকা পাইছি। কিন্তু আমার চিকিৎসার খরচ হয়ে গেছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। বিভিন্ন স্থান থেকে আশ্বাস দিচ্ছিল কিন্তু আমার পা আর ঠিক হইল না।’

মৃত্যুঞ্জয়ী রোজিনা কেমন আছেন : দুই বোন। রোজিনা বেগম ও মর্জিনা আক্তার। দুজনেই জীবিকার তাগিদে কাজ করতেন রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় পোশাক কারখানায়। শত কষ্টের মধ্যেও তাদের সংসার গোছানোর স্বপ্নটা অল্প অল্প করে এগোচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। মর্জিনার মৃত্যু হয়। আর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তিন দিন পর মৃত্যুকে জয় করে নিজের হাত নিজে কেটে বেরিয়ে আসেন রোজিনা। পরে ঢাকায় চিকিৎসা শেষে রোজিনা ফিরে আসেন নিজ বাড়িতে।

রোজিনার বাড়ি গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ছফুর উদ্দিন। তিন বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে রোজিনা সবার বড়। বিভিন্ন সংস্থার অনুদান থেকে পাওয়া টাকায় গাজীপুর বাজারের পাশে জমি কিনে বাড়ি করেছেন রোজিনা। সেই বাড়িতেই স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে তার দিন কাটে। তবে বিভীষিকাময় সেসব দিনের দুর্বিষহ স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেড়ায় রোজিনাকে। প্রায় রাতেই তার ঘুম ভেঙে যায় সেই ধ্বংসস্তূপের দুঃস্বপ্ন দেখেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রানা প্লাজা ধস,সাভার,যন্ত্রণা,ভবনধস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist