মঞ্জুরুল হক, জামালপুর
বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা পরিষদ সদস্যের মার্কেট
জেলা পরিষদ সদস্য হয়েও স্কুলশিক্ষক তিনি!
জামালপুর জেলা পরিষদ সদস্য হাবিবুুর রহমান দুলালের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমিতে ব্যক্তিগত মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ধরে রেখেছেন বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষকের পদ। আছে নিয়মিত স্কুলে না গিয়েও মাসের পর মাস বেতল উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ। জামালপুর সদরের শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত হাবিবুর জেলা পরিষদের ১৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক পদে দায়িত্বে রয়েছেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রয়েছে বিয়ারা পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১ একর ৫৫ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় দুটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৪৫ জন। যৌথ মাঠে তারা খেলাধুলা করে। কিন্তু হাবিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানের শরীর চর্চা শিক্ষক হয়েও মাঠের পূর্ব অংশের কিছু জায়গা দখল করে ব্যক্তিগত মার্কেট নির্মাণ শুরু করেছেন। এতে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার বিঘ্ন হচ্ছে।
উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো. সেকান্দার আলী বলেন, হাবিবুর রহমান শুধু বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করেননি, তিনি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি রাস্তার গাছ কাটাসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না।
বিয়ারা পলাশতলা এলাকার আলহাজ বকুল মিয়া বলেন, হাবিবুর রহমান জেলা পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে মাসের পর মাস হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। কেউ এর কোনো খোঁজখবর নেয় না।
উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, দুলালের বড় ভাই ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। সে জন্যই তার বিদ্যালয়ে যেতে হয় না। সে দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন উত্তোলন করছে এবং জেলা পরিষদ থেকেও বেতন উত্তোলন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষকও একই কথা বলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তিনি বলেন, হাবিবুর রহমান দুলাল এই প্রতিষ্ঠানের একজন এমপিওভুক্ত শরীর চর্চা শিক্ষক। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে মাঝে মধ্যে আসেন। বিদ্যালয়ের জায়গাতে তার মার্কেট নির্মাণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম শাহাজাদা এ ব্যাপারে বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গাতে মার্কেট নির্মাণ বিষয়ে আমি জানি। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই এ জমির মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান দুলালকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরাই স্কুলের দাতা সদস্য। ওই মার্কেটের নির্মাণের কাজ চলছে আমাদের জায়গাতেই। এ ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে কে অভিযোগ দেয় সেটা দেখার আছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার দুই জায়গা থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। তবে এরকম কিছু বিষয় নিয়ে হায়কোর্টে রিট রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফরুজা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের জায়গায় ব্যক্তিগত কারো মার্কেট নির্মাণ করা হলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিডিএসও/রানা