মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর)
ভরাট হয়ে গেছে শৈলখালী খাল
২৫ গ্রামের ইরি-বোরো ধান বিনষ্টের পথে
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাড়কের শৈলখালী সেতুর নিচে শৈলখালি খালের অংশ এবং আলীগঞ্জ থেকে গঙ্গানগর গ্রাম পর্যন্ত বালি ও মাটি ভরাট এবং খালের দুইপাশ সরু হয়ে গেছে। এতে উপজেলার ২৫টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক কৃষকের ইরি-বোরো ধান নষ্ট হওয়ার পথে।
সরেজমিনে জানা যায়, শৈলখালি খালটি ডাকাতিয়া নদীর হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৯ নং ওয়ার্ড আলীগঞ্জ থেকে শুরু হয়। এর আওতাধীন হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন ৯টি মৌজা, শাহরাস্তি উপজেলার ৭টি ও কচুয়া উপজেলার ৪টি মৌজার অর্ন্তগত প্রায় ২৫টি গ্রামের ১০ হাজার একর জমিতে ইরি-বোরো ফসল হয়ে থাকে। কিন্তু কুমিল্লা-চাদপুর আঞ্চলিক মহাড়কের শৈলখালি সেতুর নিচে বালি দিয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং আলীগঞ্জ থেকে গঙ্গানগর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বালি ও মাটি দ্বারা ভরাট এবং খালের দুপাশে সরু হয়ে যাওয়ায় এ বছর খালে পানি পায়নি কৃষক। ফলে পানির অভাবে যথা সময়ে কৃষক ধানের চারা বপন করতে পারেনি।
এদিকে নিজস্ব উদ্যোগে বিকল্প পথে পানির ব্যবস্থা করলেও নতুন করে সমস্যায় পড়েছে কৃষক। দেরিতে ও বয়স্ক চারা রোপন করায় নানাবিধ সমস্যা পড়তে হচ্ছে তাদের। চারা রোপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যেই ফল এসে যায় এবং ফলন আসা মাত্রই বিভিন্ন রোগ বালাই ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয়েছে। যা ইরি-বোরো মৌসুমে কখনো দেখা যায় নি। এর সাথে কৃষক নতুন চিন্তায় পড়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি আটকে আছে। যার ফলে কাক্সিক্ষত ফসল তো দূরের কথা, নূন্যতম ফসলের বিষয়েও তারা সন্দিহান। পানি না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন এনায়েতপুর, কংগাইশ, হাটিলা পূর্ব, হাটিলা পশ্চিম, বলিয়া, লাওকোরা, টঙ্গিরপাড়, নোয়াপাড়া, হাড়িয়াইন, বেলঘর। শাহরাস্তি উপজেলার গুইলপুরা, ইছাপুরা, রাজাপুরা. বলশিদ, সেতরা, রাড়া, মুড়াগাঁও। কচুয়া উপজেলার আকানিয়া, নাছিরপুর, পরানপুর, লক্ষিপুর, পদুয়া, সাদিপুরা-চাঁদপুরসহ তিন উপজেলার প্রায় ২৫টি গ্রাম। এবং এই ২৫টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক রয়েছেন, যাদের অনেকেই কৃষি নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আবু সুফিয়ান বলেন, এক কানি (১২০ শতাংশ) জমিতে ইরি-বোরো ফসলে ব্যয় প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়ে থাকে। গন্ডা (৬ শতাংশ) প্রতি ৪ থেকে ৫ মণ ধান হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে ধানের চারা দেরিতে বপন করায় ১ থেকে ২ মণের বেশি হবে না। যার ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ। এখন জমিতে পানি আটকে এ ফসলও বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাটিলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন মজুমদার জানান, খালটি পুনরায় খনন করার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বিডিসি হাজীগঞ্জ ইউনিটের উপ-প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ), জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, চাঁদপুর-লক্ষীপুর জেলা সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ এ্যাড. নুরজাহান বেগম মুক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হলেও কোনো প্রতিকার পাইনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সূত্রধর প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আজকালের মধ্যেই আমি মাঠ ভিজিট (পরিদর্শন) করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পিডিএসও/রানা