কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ০৭ মার্চ, ২০১৮

উপকূলের অনেক নারীই জানেনা বিশ্ব নারী দিবস কী

উপকূলের অনেক নারীই জানেনা বিশ্ব নারী দিবসের কথা। তারা শুধু জানে সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করে সংসার চালানোর কথা। খেটে খাওয়া এ সব নারীরা ঠিকঠাক ভাবে সংসার পরিচালনা করতে পারলেই তাদের সুখ।

কলাপাড়া উপজেলার মহিলা মার্কেটের লন্ড্রীর দোকানী সেফালী রানী। এ মহিলা মার্কেটের সব কটি স্টল পুরুষদের দখলে থাকলেও শুধু সেফালী রানীর লন্ড্রীর দোকানাটাই নারী হিসেবে আছে। সেফালী রানীর বয়স আশির কাছাকাছি। এক ছেল, ছেলের বউ ও নাতনীকে নিয়ে তার সংসার। পৌর শহরের চিংগড়িয়া এলাকায় তার বাড়ী। ১৯৭১ সালে তিনি স্বামী হারান। স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল লন্ড্রীর দোকান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। ছেলে স্বপন দাসকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনেক কষ্টের পরও অভাবের কারনে তা সম্ভব হয়নি। প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ মানুষের জামা-কাপড় ধইুয়ে, ইস্ত্রী করে পরিষ্কার করেই জোগাড় হয় দুবেলা দুমুঠো অন্য। এ লন্ড্রীর দোকান থেকে যা আয় করেন তা দিয়েই সংসারের ভরপোষণ বহন করেন তিনি। তার কাছে নারী দিবসের কথা জানতে চাইলে? তিনি বলেন, কিসের আবার নারী দিবস? আমি অতসত বুঝিনা, আমি শুধু বুঝি সারাদিন লন্ড্রী চালিয়ে গায়ে খেটে রোজগার করে সংসার চালানোর কথা। আর সংসারের সবাইকে নিয়ে খেয়ে পড়ে বেচে থাকতে পারলেই আমার সুখ। শুধু সেফালী রানীই নয়, এরকম উপকূলের খেটে খাওয়া শ্রমজীবি অনেক নারীরাই যানেনা বিশ্ব নারী দিবসের কথা। কি এই নারী দিবস? কেন পালন করা হয় এই নারী দিবস? এর ইতিহাস কি? ৮মার্চ সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্য নিয়ে এ দিবস পালন করা হয়। কোথাও কোথাও মুখ্য বিষয় থাকে নারীর প্রতি সাধারন সম্মান ও শ্রদ্ধা, কোথাও নারীর বৈষম্য, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের মুখ্য বিষয় বেশি হয়ে থাকে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৭ খিষ্টাব্দে মজুরীবৈষম্য, কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিউইয়র্কেও রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার একদল নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রি: নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাপ নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তজার্তিক নারী সম্মেলন হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯৯০ খ্রি: ডেনমার্কে আন্তজার্তিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এ সমাবেশে যোগ দেয়। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রি: থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতান্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রি: থেকে কয়েকটি দেশে ৮মার্চ নারী দিবস পালিত হতে থাকে। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। এরপর ১৯৭৫ সালের ৮মার্চ আন্তজার্তিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই সম-অধিকার আদায়ের জন্য দিবসটি পালিত হয়।

কলাপাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাসমিলা আক্তার জানান, প্রত্যেকটা মহিলা বিষয়ক সভায় সংরক্ষিত আসনের যে সব মহিলা সদস্য রয়েছে,তাদের মাধ্যমে নারী দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নারীদের কাছে পৌছে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ব নারী দিবস কী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist