শাকিল আহমেদ, ঠাকুরগাঁও

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সেই মেয়র আলমগীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

সাংবাদিককে ‘কেটে ফেলা’র হুমকি দেওয়া পৌর মেয়র আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা, সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান ও সাধারণ মানুষকে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগও আছে রানীশংকৈল পৌরসভা মেয়রের বিরুদ্ধে। গত ২৮ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে রাস্তার কাজে অনিয়ম নিয়ে ‘দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ’-এ প্রতিবেদন প্রকাশ হলে পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিকে ‘কেটে ফেলা’র হুমকি দেন তিনি, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার কলম বিরতি পালন করেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মেয়র আলমগীর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। তার পেটুয়া বাহিনীরা এলাকার টেন্ডারবাজি, জমি দখলসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

পৌর মেয়র আলমগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পৌরসভায় কোনো টেন্ডার হলে তিনি সেসব টেন্ডারগুলো তার নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এরপর তিনি সেগুলো অর্থের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেন। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। ২০১১ সালে রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে লাঞ্ছিত করেছিলেন এই পৌর মেয়র। ওই ঘটনায় মামলাও হয়েছিল। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদেরই নয়, দলীয় অসংখ্য নেতাকর্মীদের লাঞ্ছিত করেছেন তিনি।

প্রায় ৭ বছর আগে টেন্ডারবাজি নিয়ে বর্তমান রানীশংকৈল পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন সরকারকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়ে ছিলেন মেয়র আলমগীরের সমর্থকরা। ২০১৭ সালের ৪ মে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মসূচিতে বাধা দেয় পৌর মেয়র আলমগীর সরকার ও তার লোকজন। এক সময় সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মুখপত্র ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এছাড়াও গত বছর নভেম্বরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ী সেলিম জাবেদকে মারধরও করেছিলেন মেয়র আলমগীর।

২০১১ সালের দিকে রানীশংকৈল থানার ডিএসবি মেহেদীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন স্থানীয় সাংবাদিক মোবারক আলী। এই সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তাকে লাঞ্ছিত করেছিলেন আলমগীরসহ তার লোকজন। সে ঘটনায় থানায় মামলাও করেছিলেন সাংবাদিক মোবারক। পরে স্থানীয়ভাবে আপসের মাধ্যমে রেহাই পায় মেয়র আলমগীর। রাস্তার অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ পত্রিকার রানীশংকৈল উপজেলা প্রতিনিধি খুরশিদ আলম শাওনকে ‘কেটে ফেলার’ হুমকি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, মেয়র আলমগীর গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিয়ে কটূক্তিও করেন এবং দিনে ২১ হাজার সাংবাদিক তৈরি করার বক্তব্য দিয়ে হাসির খোরাকে পরিণত হন।

পৌর মেয়র আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে রানীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়নসহ গ্রাম অঞ্চলগুলোতে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, পৌর মেয়র আলমগীর সরকারের ভয়ে সাধারণ মানুষরা আতঙ্কিত। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেই তাকে মারধর করাসহ হয়রানি করে তার লোকজন।

রানীশংকৈল প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. বিপ্লব বলেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মেয়র আলমগীর সরকারের রানীশংকৈলের সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত ও মারধরের ঘটনা নতুন কিছু নয়; এসব ঘটনার পরও স্থানীয় প্রশাসন বা দলীয়ভাবে কেউ এই মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

আওয়ামী লীগ নেতা খোকন সরকার বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি ও পাশাপাশি ঠিকাদারি পেশায় জড়িত। টেন্ডার ড্রপ নিয়ে মেয়র আলমগীরের সমর্থকরা আমাকে মারধর করেছিল। আলমগীর এখন মেয়র ও যুবলীগ নেতা; সে যেটা ভালো মনে করে সেটাই করে। সে সিনিয়র কোনো নেতার কথা শুনে না। মেয়র সব সময় ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে এ ধরনের অপরাধগুলো করে আসছে। কিন্তু আদৌ এসব ঠিক না।’

নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এলাকায় তার পেটুয়া বাহিনী সাধারণ মানুষের জমি দখলসহ নানা অপকর্ম করে আসছে, এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এগুলো ঠিক নয়।

মেয়র আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে এ নিয়ে রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেয়রের সম্পর্কে কথা বলতে রাজি হননি; তিনি বলেন, ভাই আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল মজিদ আপেল বলেন, কেউ যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মেয়র আলমগীর,অভিযোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist