রাজশাহী প্রতিনিধি

  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

রাজশাহীতে ৫ বছরে ৩ হাজার পুকুর খনন

কমছে কৃষিজমি, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা

রাজশাহী অঞ্চলে কৃষিজমিতে চলছে পুকুর কাটার হিড়িক। গত পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার পুকুর কাটা হয়েছে। এসব পুকুর কাটতে মানা হচ্ছে না সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও ভূমি আইন। এতে কমছে কৃষিজমি। একদিকে আবাদি জমির পরিমাণ যেমন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় জমিতে আবাদ করতে পারছেন না চাষিরা।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষিজমিতে পুকুর খননেন হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু গত বন্যার কারণে থেমে যায় পুকুর খনন। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর ২০১৮ সালের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় আবারও শুরু হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন। এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না ভূমি আইন ও কোনো নিয়মকানুন।

স্থানীয় প্রভাবশালী মহল একরকম জোর করেই পরিবর্তন করে আবাদি জমিকে পুকুরে পরিণত করছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে পুকুর কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও থামছে না পুকুর কাটা। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন বলছেন, এই পুকুর কাটা সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, এদের কাছে প্রশাসনও অসহায়। কেউ কেউ আবার দাবি করছেন হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে তারা পুকুর কাটছেন।

ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে একে কেউ কেউ উন্নয়ন কর্মকা- বললেও ভবিষ্যতে এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ। অনেক এলাকায়ই বন্ধ হয়ে গেছে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ। পুকুরগুলোর পার্শ্ববর্তী জমিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। চলতি রবি মৌসুমে অনেক পুকুরের পাশে হাজার হাজার বিঘা জমিতে শুধু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আলু, গম, সবজিসহ অন্যান্য আবাদ মার খেয়েছে। পুকুরের কারণে মালিকদের সঙ্গে এলাকাবাসির দ্বন্দ্ব নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে ধরনা ধরছেন। শুধু ব্যক্তিমালিকানা জমিতে নয়, সরকারি খাস জমিতেও পুকুর কাটা হচ্ছে অবাধে। প্রশাসন খাতা-কলমে কিছু মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে সাজা দিলেও খননের কাজ থেমে নেই। বর্তমানে পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মাধবপুর বিল, কানপাড়া বিল ও হুজরীপাড়া ইউনিয়নের কর্নহার বড়বিলে এসকেভেটর মেশিন দিয়ে খনন করা হচ্ছে এসব পুকুর।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, বাগমারা উপজেলা পরিষদ থেকে কয়েক শ গজ দূরে ভবানীগঞ্জ কলেজের পাশে সোনাবিলে মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যক্তি পুকুর খনন শুরু করেছেন। সপ্তাহ ধরে এই কাজ করছেন, একাধিক খননযন্ত্র দিয়ে পুকুর খনন শুরু করেছেন। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রশাসন ও স্থানীয়রা কিছু বলছেন না। তার পুকুর খননের কারণে বিলটিতে জলাবদ্ধতা ও ফসলহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অথচ, সরকারি নীতিমালায় বলা হয়েছে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি ছাড়া কৃষিজমিতে পুুকুর খনন বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। সে দিকে তোয়াক্কা না করে দিব্যি পুকুর খনন করে চলেছেন।

অন্যদিকে পৌরসভার কসবা এলাকাতেও চলছে পুকুর খনন। পুকুর খননকারীরা দাবি করেছেন তারা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুকুর খনন শুরু করেছেন। তবে এ-সংক্রান্ত লিখিত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া ভুমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দ-নীয় অপরাধ। শিগগিরই এসব বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, গত পাঁচ বছরে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর খনন করা হয়েছে তিন হাজার ৩৫টি। এইসব পুকুরে যাওয়া জমির পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার বিঘা। এই সব পুকুর খননের ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ৩২৮ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় দুই হাজার ৫০০ বিঘা আবাদি জমিতে।

এ ব্যাপারে কৃষিবিদ মনজুরে মাওলা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নিয়ম না মেনে এই পুকুর খননের ফলে একদিকে যেমন আবাদি জমি কমেছে, অন্যদিকে পুকুরের পাশের জমিতে চাষিরা আবাদ করতে পারছেন না জলাবদ্ধতার কারণে। এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’র প্রতিনিধি তন্ময় স্যানাল বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক জমির রকম পরিবর্তন করা যাবে না। যদি কোন কারণে রকম পরিবর্তন করা লাগে তবে আবশ্যই জমি সংশ্লিষ্টদের প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে কৃষি জমি ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। যা থেকে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পুকুর খনন,রাজশাহী,কৃষিজমি,জলাবদ্ধতা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist