গাজীপুর প্রতিনিধি

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

যানজটে নাকাল যাত্রীরা : গাড়ি চলে ধুঁকে ধুঁকে

মহাসড়কের চৌরাস্তা এবং ত্রিমুখীমোড়ে যানবাহন চলাচল করানো হয় রেশনিং পদ্ধতিতে

যানবাহনের অধিক চাপ, জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা রাস্তা, কলকারখানার শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, সিটি করপোরেশনের ময়লা, ভ্রাম্যমাণ বাজার ইত্যাদি কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। মহাসড়কের এ অংশ দিয়ে যানবাহন এগোয় যেন এক রকম ধুঁকে ধুঁকে। ওইটুকু পথ সাধারণ গতির যানবাহনে পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টার মতো সময় প্রয়োজন হলেও এখন সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। মহাসড়কের টঙ্গী-চান্দনা চৌরাস্তা অংশের এ চিত্র প্রায় নিত্যদিনের। এতে নাকাল হচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী।

রাজধানী ঢাকার সীমানাসংলগ্ন জেলা গাজীপুর। অবস্থানগত কারণে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গাজীপুরের এ মহাসড়ক অন্যতম। অনেক সড়ক-মহাড়কের সংযোগ হয়েছে টঙ্গী-জয়দেবপুর চৌরাস্তা অংশে। সড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মিলিত হয়েছে ঢাকা-গাজীপুর, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এর আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পাশে এ মহাসড়কের বুক চিরে গেছে ঢাকা বাইপাস সড়ক, টঙ্গী স্টেশন রোড় এলাকায় মিলিত হয়েছে আশুলিয়া থেকে আসা কামারপাড়া সড়ক এবং টঙ্গী-ঘোড়ারশাল সড়ক। মহাসড়কের চৌরাস্তা এবং ত্রিমোড়গুলোতে যানবাহন চলাচল করানো হয় রেশনিং পদ্ধতিতে (সড়কে এক পাশ বন্ধ রেখে অপর পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করানো হয়)। এতে বন্ধ সাইটে মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।

গাজীপুর বাস-মিনিবাস পরিবহন মালিক সমিতির কর্মকর্তাদের মতে, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে প্রতিদিন দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের জেলাগুলোর অন্তত ৩৮টি রুটের বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করে অথবা ঢাকা থেকে বেরিয়ে যায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের ওই ১২ কিলোমিটার পথে অন্তত ৩০টি শাখা রোড মিলিত হয়েছে। যে রাস্তাগুলো দিয়ে অহরহ যানবাহন যোগ হচ্ছে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের সঙ্গে। এছাড়া মহাসড়কের পাশে অনেক স্থানে বসে কাঁচাবাজার, বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী ভ্যান গাড়ির দোকান। ফলে টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, মিলগেট, বাস্তুহারা, বোর্ডবাজার, ছয়দানা ও ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়তে হয়। জয়দেবপুর চান্দনা চৌারাস্তা মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের রাস্তার ওপর প্রতিদিন বসে নানা পণ্যের অস্থায়ী বাজার, উত্তর-পশ্চিম পাশে লেগুনা স্ট্যান্ড বসে। এছাড়া মহাসড়কের বাস স্টপেজগুলো এলাকায় মহাসড়কের ওপর রিকশা স্ট্যান্ড ও এলোপাতাড়ি গাড়ি থামানো, চালকদের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে অহেতুক যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

এদিকে, ভোর থেকেই এই সড়কের উভয় পাশ হাজার হাজার বাস, ট্রাক, লরি, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটো আর অটোরিকশার চলাচল শুরু হয়। এই অবস্থা চলতে থাকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত। যানবাহনের চাকার চাপে বহু জায়গায় পুরনো পিচঢালা সড়কের বুকে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। এছাড়া এক সঙ্গে অনেক গাড়ি প্রবেশ করায় যানবাহনের দূরত্ব এবং গতি থাকে কম। ফলে মহাসড়ক দিয়ে এক রকম ধুঁকে ধুঁকে যানবাহন এগোতে হয়। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আইইটি, ডুয়েট, বাংলাদেশ ধান-কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, টাকশাল, সমরাস্ত্র কারখানা, আনসার একাডেমিসহ বহু জাতীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে গাজীপুরে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যাতায়াত করেন সকালে-বিকেলে।

এই মহাসড়কের নিয়মিত যাত্রী হোসেন খান, মিল্টন খন্দকার জানান, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এবং ভোগড়া বাইপাস অংশে যানজট থাকে বেশি। এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে দুইটি চৌরাস্তা হওয়ায় প্রায়ই এ পথটুকু থাকে যানবাহনে ঠাসা। অনেক সময় এ পথটুকু পারি দিতে প্রায় ১ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

গাজীপুর সওজর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ বি এম সাদ্দাম হোসেন জানান, মহাসড়কগুলোতে গাড়ির সাধারণ গতিবেগ ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার ঘণ্টায়। জয়দেবপুর চৌরাস্তা দিয়ে প্রতি মিনিটে ২৫টির মতো গাড়ি ঢাকা অভিমুখে প্রবেশ করে। মহাসড়কের এ অংশে পারাপারের নির্দিষ্ট স্থান নেই। গার্মেন্ট শ্রমিকসহ মানুষের যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে মহাসড়ক পারাপার, চালকদের রাস্তায়ই গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, চৌরাস্তা-ত্রিরাস্তা এলাকায় গাড়ি পারাপারের সময় সিগন্যাল পড়াসহ বেশি যানবাহন চলাচল করার কারণে এ অংশে সাধারণ গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারে না।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ডি এ কে এম নাহিন রেজা জানান, মহাসড়কটির টঙ্গী ব্রিজ থেকে চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার মহাসড়ক বিশ্ব ইজতেমার আগে গাজীপুর সড়ক বিভাগ মেরামত করেছে। তিনি জানান, এ মহাসড়কটির বিআরটিএর প্রকল্পের আওতায় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যে কার্যাদেশ পাওয়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে মহাসড়কটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যানবাহন,গাজীপুর,ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক,দুর্ভোগ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist