নিজস্ব প্রতিবেদক
শৈবাল ইস্যুতে কক্সবাজারে পর্যটনমন্ত্রী, ১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ঘোষণা
বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহাজাহান কামালের কক্সবাজার সফরকালীন সময়েই হরতালের ঘোষণা। জানা গেছে, কক্সবাজারে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল শৈবালের মূল মোটেলসহ ১৩৫ একর জমি লিজ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করেছে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন ও কক্সবাজার নাগরিক সমাজসহ স্থানীয় ২২টি সংগঠন।
মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী এই ঘোষণা দেন। কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা মফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মফিজুর রহমান জানান, গোপনে ১৩৫ একর জমিসহ ঐহিত্যবাহী শৈবাল লিজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর তা প্রকাশ হলো। কিন্তু কক্সবাজারবাসী ও পর্যটনের স্বার্থে এই লিজ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ক্ষতি করবে। এই লিজ প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবিতে হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। হরতালের দু’দিন আগে জনসমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজারে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।
কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কক্সবাজার অনেক সম্পদ সংকুচিত হয়েছে। সর্বশেষ শৈবালের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিও বেহাত হতে চলেছে। এটা কক্সবাজারবাসীর অমূল্য সম্পদ। পর্যটন করপোরেশন বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপের সাথে চুক্তি করতে তা কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবো আমরা। এই জন্য আমরা কক্সবাজারবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করবো।
এর আগে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহাজাহান কামাল বলেছেন, কক্সবাজারের আলোচিত শৈবাল হোটেল ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ইস্যু নিয়ে কক্সবাজারবাসীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্যই শুধু আমি কক্সবাজার এসেছি। আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করবো। মঙ্গলবার দুপুরে আলোচিত শৈবাল ইস্যুতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যান-জ্ঞান জুড়েই দেশের উন্নয়ন। আর এই উন্নয়ন হলো জনগণের জন্য। তাই প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি মাথায় রেখে শৈবালের বিষয়ে ওনার সিদ্ধান্ত দেবেন। এই জন্য আমি কক্সবাজারবাসীর প্রতিক্রিয়া ওঁনার কাছে যথাযথ তুলে ধরবো।
মন্ত্রী আরো বলেন, কক্সবাজার হচ্ছে বাংলাদেশের আলো। তাই কক্সবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনেক স্বপ্ন। আপনারা দেখছেন উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেই স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। আমি আশা রাখবো, প্রধানমন্ত্রীর এই উন্নয়নে কক্সবাজারবাসী সহযোগিতা করবেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস.এম গোলাম ফারুক, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান কবির, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. নাঈম হাসান, জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালক লে. জেনারেল শাব্বির আহমদ, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান।
এছাড়াও কক্সাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত কক্সবাজারের শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা বিবাদমান শৈবাল ইস্যু নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। সবাই তীব্র বিরোধিতা করে কক্সবাজারের এই অমূল্য সম্পদকে বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে না দিতে আহ্বান জানান। আলোচনার সভার পরে মন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদল শৈবাল হোটেলসহ পুরো এলাকা পরিদর্শন করেন।