মাসুদ রানা, বরিশাল প্রতিনিধি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮

বরিশালে অপরিকল্পিত উন্নয়ন : বাড়ছে ভোগান্তি

অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে ফোর লেন সড়ক, ফুটপাত, ড্রেন, শহর রক্ষাবাধ কোনের কিছুই কাজে আসছে না নগরবাসীর। যে কারণে ভোগান্তি কমছে না বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষদের। শহর এলাকায় দিন দিন মানুষের চাপ যত বাড়বে এ সংকট আরো তীব্রতর হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, মাস্টারপ্লান লঙ্ঘনই এর একমাত্র কারণ। এর পরেও সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না নগর ভবন। ঢামাডোল বাজিয়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল নগরীর কাশিপুর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ফোর লেন করা হয় ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ফোর লেনের মাঝে দুটি কালভার্ট থাকায় ফোর লেন অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। এ ছাড়াও নথুল্লাবাদ বাস-টার্মিনাল এলাকায় ফোর লেনের মুখে একটি হোটেল রয়েছে। সেখান থেকে ফোর লেনে গাড়ি ঢুকতে পারে না। এ কারণেই অচল হয়ে আছে ফোর লেন। এ সুযোগে অনেকে ফোর লেন দখল করে গড়ে তুলছে দোকানপাট।

এদিকে নগর উন্নয়ন অধিদফতরের তথ্যমতে, ফুটপাত হতে হবে সাত ফুট। অথচ বরিশাল নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত দুই থেকে তিন ফিট করা হয়েছে। অন্যদিকে ড্রেন নির্মাণেও রয়েছে ত্রুটি। গভীরতায় ও প্রস্থে বড় করা হয়নি ড্রেন। তাই বৃষ্টি হলেই নগরী পানিতে ডুবে যায়। সিটি করপোরেশন আর একটি ভয়াবহ অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে শহররক্ষা বাঁধ। নগরীর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলার বিশাল অংশ ভরে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে।

নগরীর জিলা স্কুলের বিপরীতে বর্তমানে ১২ তলা ভবন তৈরি করছেন ধর্ণাঢ্য লঞ্চ ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান রিণ্টু। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী ওই এলাকা ‘সংরক্ষিত’ হওয়ায় সেখানে পাঁচ তলার ওপরে ভবন করা যাবে না। নগরীর সদর রোডের অভিজাত হোটেল এড়িনাও একইভাবে আইন লঙ্ঘন করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর পাশেই সার্কিট হাউসের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ভাটার খাল বিলীন হয়ে গেছে। বিগত মেয়র হিরন এটি ভরে সড়ক নির্মাণ করায় বর্ষায় গোটা এলাকা তলিয়ে যায়। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খায়রুল মামুন শাহিন জানান, ফোর লেন চালু না হওয়ার কারণে শহরের যানজটের চাপ কমছে না। অন্যদিকে ফুটপাত সরু হওয়ায় পথচারীরা রাস্তায় নামলে পড়ে চরম বিপদে।

বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এ নগরীর অধিকাংশ উন্নয়ন হচ্ছে পরিকল্পনা ছাড়াই। নগরীর সড়ক, ফুটপাত, ড্রেন তৈরি হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। নগরবাসী এজন্য জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছেন। ২৫ কোটি টাকায় যে ফোর লেন করা হয়েছে, তার মাঝে কয়েকটি কালভার্ট থাকায় তা দিয়ে যানবাহন চলতে পারছে না। তিনি বলেন, কীর্তনখোলা নদী ভরে সিটি করপোরেশন যে শহররক্ষা বাঁধ করেছে, তাতে নগরী হুমকির মুখে পড়েছে।

নগর উন্নয়ন অধিদফতর বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের সিনিয়র প্লানার আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১০ সালে অনুমোদন হওয়ায় ‘বরিশাল শহর মাস্টারপ্লান’ অনুসরণ করছে না সিটি করপোরেশন। তারা যেকোনো স্থাপনা অনুমোদন দেওয়ার আগে বিষয়গুলো দেখছে না। বিসিসি দায়িত্ব পালন করছে না বলেই নগরী হুমকির মুখে পড়ছে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ আছে। ভাঙন রোধে সেটি করা হয়েছিল। ফোর লেন, বহুতল ভবন, ফুটপাত তার যোগদানের আগে হয়েছে। এগুলো নির্মাণে মাস্টারপ্লান লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, নগরীর ফোর লেন ও অধিকাংশ ড্রেনই সাবেক মেয়র হিরন সাহেবের হাতে করা। ওই অপরিকল্পিত উন্নয়ন সমাধানে আমি চেষ্টা করব।’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বরিশাল,বরিশাল সিটি করপোরেশন,অপরিকল্পিত উন্নয়ন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist