মানিকগঞ্জে রাস্তার জন্য ৪ হাজার গাছ কর্তন
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জ-সিংগাইর- হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রায় চার হাজার গাছ বিক্রি করে দিয়েছে জেলা পরিষদ। সামাজিক বনায়নের আওতায় স্থানীয় বাসিন্দারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করলেও তাদের না জানিয়েই গাছ বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী, তাদের প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে না দিয়েই গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহন শ্রমিকরা জানান, হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে নানা প্রজাতির সারিবদ্ধ বড় বড় গাছ ছিল। কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণের নামে এই গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলো হচ্ছে।
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি দুই লেনে উন্নতকরণের কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে রাস্তার দুই পাশের সকল গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্রের মাধ্যমে ৩৭২৬টি গাছ চারজন ঠিকাদার কিনে নিয়েছে। ভ্যাটসহ যার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা।
এদিকে, মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ রাস্তার গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করলেও, এগুলো সামাজিক বনায়নের গাছ ছিল বলে জানা গেছে। সিংগাইরের গেরাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা রজ্জব আলী ও সোবহান মিয়াসহ স্থানীয়রা জানান, ১৯৯১ সালে বেসরকারি সংস্থা প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে ১০ টি পুরুষ ও মহিলা সমিতির সদস্যরা উপজেলার জয়মন্টপ থেকে ডেপলতলি পর্যন্ত কয়েক হাজার গাছ রোপণ করে। সিংগাইর উপজেলা পরিষদ থেকে লিজ নিয়ে সমিতির দুই হাজার সদস্য নিজ খরচে এই গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী, সমিতির সদস্যরা লাভের ৬০ ভাগ অংশের মালিক। বাকি ৪০ ভাগের মধ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থা প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ২০ ভাগ এবং সিংগাইর উপজেলা পরিষদ ২০ ভাগ অংশের মালিক। কিন্তু তাদের কারোরই প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সমিতির সদস্যরা গাছ কাটতে বাধা দিলেও তাদের ধমক দেওয়া হয়। চুক্তিপত্রের দলিল নিয়ে তারা উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ কর্মকর্তাদের কাছে ঘুরলেও তাদের পাত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান রোমান জানান, গ্রামের হতদরিদ্র নারী-পুরুষ ভবিষৎতের আশায় গাছগুলো রোপণ করেছিলেন। অথচ তাদের না জানিয়ে এবং প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে না দিয়েই গাছ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চুক্তিপত্র অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদও লাভের ২০ ভাগের মালিক। অথচ গাছ বিক্রির আগে ও পরে জেলা পরিষদ থেকে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনোয়ার হোসেন জানান, উপযুক্ত প্রমাণসহ কেউ গাছের প্রকৃত দাবিদার থাকলে প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তার দুই পাশই সম্প্রসারণ করবে। গাছ না কেটে কোনো উপায় নেই। সম্প্রসারণের পর দুই পাশে আবারও গাছ রোপণ করা হবে জানান তিনি।
"পিডিএসও/তাজ