reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮

চকরিয়ার কাঠ ব্যবসায়ীরা

বন বিভাগে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়েও হয়রানির শিকার

চকরিয়া উপজেলা মূলত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, আরকান মহাসড়কের পশ্চিম দিকে তাকালে বুঝা যায় লবণ মাঠ আর চিংড়ি ঘেরে সমাদৃত। পূর্বদিকে তাকালে বুঝা যায় সরকারী রিজার্ভ বন ও জনসাধারণের গড়ে তুলা গাছ-গাছালি বন-জঙ্গল নিয়ে পাহাড় ঘেরা সবুজ বেষ্টনী। তৎমধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন ও এশিয়ার সর্ববৃহৎ সাফারি পার্ক এ অঞ্চলে অবস্থিত।

চকরিয়ার মোট আয়তন ৫০৩৭৪ হেক্টর ভূমি, যার মধ্যে ১৩১৬২ একর বসতি ও বিভিন্ন রকমের স্থাপণাযুক্ত, রিজার্ভ বন ১৩৭০০ হেক্টর, বাগদা চাষভুক্ত ১৩৩৭৯ হেক্টর, লবণ মাঠ ৮৫৩২হেক্টর, কৃষি জমি ২২৪৩২ হেক্টর, পতিত জমি ৩৫০ হেক্টর, স্থায়ী পতিত জমি ১৫০ হেক্টর, ফসলি জমি ২২২৭৩ হেক্টর। এ এলাকার জনসাধারণের জীবনমাত্রা কৃষি ও বনের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। বিশেষ করে চকরিয়া কাঠ ব্যাবসায়ীরা অতীত থেকে সরকারি বিধি মেনে সুনামের সহিত ব্যাবসা করে আসছেন। কিন্তু বন বিভাগকে নর্থ ও সাউথ দু সেক্টরে ভাগ করে কার্যবিধি পরিচালনার পর থেকে কাঠ ব্যাবসায়ীদের কপালে ঢেঁকি বসতে শুরু করেছে। এরমধ্যে বনবিভাগের সীমানা ২ কিলোমিটারে ব্যবধানের মধ্যে কক্সবাজার বন বিভাগ এবং চট্রগ্রাম বন বিভাগের সীমানা জুড়ে স্থানীয় কাঠ ব্যাবসায়ীদের মালিকানা বাগান ও ঘরোয়া বিভিন্ন জাতের বাজে কাঠের লাকড়ি, বল্লী, বোরখা ইত্যাদি স্থাপনা তৈরিতে যা একান্ত আবশ্যক এসব কাঠের মূল ব্যাবসা। সরকারী টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজিক বনায়নের গাছও ধৃত কাঠ অনেক ব্যবসায়ী লিজ নিয়ে থাকেন।

এ সমস্ত কাঠ স্থানান্তরের জন্য বন বিভাগে কর্তব্যরত স্টাফদের দিতে হয় মোটা অংকের মাসোহারা। আর যারা ঠিকমত দিতে পারেনা তাদের ব্যাবসায় লেগে যায় শনির দশা। ঠিক তেমনি সোমবার রাত আটটার সময় চট্রগ্রাম বনবিভাগের দক্ষিণ রেঞ্জের (এসি এফ) ফাহিম মাসুদ লামার আজিজনগর থেকে আসা তিনটি লাকড়ির গাড়ির উপর স্পেশাল অভিযান পরিচালনা করে বানিয়াছড়া বনবিট হেফাজতে নিয়ে যায়। তৎমধ্যে শুক্কুর, আজিজনগরের আহমদ ছফা মাষ্টারের পুত্র গেইট বাবুল, আজিজনগরের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের পুত্র জাহাঙ্গীরের লাকড়ী গাড়ি বলে জানা যায়। ধৃত এসব লাকড়ি কাঠ তাদের নিজস্ব বাগানের বলেও জানা যায়।

স্থানীয় জনসাধারণ জানান, (এসি এফ) ফাহিম মাসুদ অভিযান পরিচালা শেষে বানিয়াছড়া বিট অফিসে অবস্থান নেয়াকালে একই অফিসের বন প্রহরী আলী আকবর কাঠ ব্যাবসায়ী শুক্কুরের কাছ থেকে নয় হাজার টাকা তার পকেটে নিয়ে অভিনব কায়দায় লাকড়ি ভর্তি কাঠের গাড়ি ছেড়ে দেন। উক্ত খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আম জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে( এসিএফ) ফাহিম মাসুদের উপর চড়াও হয়ে বিট অফিসের গেইট ভেঙ্গে বাকি দুইটি গাড়ী নিয়ে যায়। পরবর্তী থানা পুলিশের উপস্থিতে স্বাভাবিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে আনে।

উক্ত বিষয়ে (এসি এফ) ফাহিম মাসুদের ঘটনার সত্যতা যাচাই মর্মে মুঠোফোনে আলাপকালে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, আমি যখন ফোর্সসহ কোন অভিযান পরিচালার উদ্দেশ্যে রওনা হলে অফিসের স্টাফদের সাথে সখ্যতা থাকায় গোপনীয়তা ফাঁস হওয়াতে শুধুমাত্র রেঞ্জার সাহেবকে অবহিত করে আমি বাসে করে পদুয়া থেকে রওনা হই। প্রতিদিন লামার ফাইতং মৌজায় সন্ধ্যার পরে ২৭টির ব্রিকফিল্ডের ইট পোড়ানোর জন্য দৈনিক ৫০ থেকে ৬০টি লাকড়ি বোঝায় গাড়ি যাওয়া আসা করে, যার ফলে সরকারী বনায়ন উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এপ্রেক্ষিতে আমি ফোর্স বিহীন গোপনীয়তা রক্ষার্থে বাসযোগে বানিয়াছড়া বিটে এসে পৌঁছাই। ঠিক অল্প সময়ের ব্যাবধানে তিনটি লাকড়ী ও কাঠ বোঝায় গাড়ীসহ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত গাড়ি বিট অফিসের ভিতরে নিয়ে আসার পর অফিসের স্টাফ আলী আকবরকে গাড়ির চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে অফিসে অবস্থান করি। এমতাবস্থা কিছক্ষণের ব্যবধানে স্থানীয় লোকজন ঝড়ো হয়ে অফিসের মেইন গেইট ভাংচুর করার পরে আলী আকবরকে মেরে গাড়িগুলো জোরপূর্বক নিয়ে যায়। মাসোয়ারা বিষয়ে তিনি সম্পুর্ণ অস্বীকার করেন।

তিনি আরো বলেন, সরকারী কাজে বাধা প্রদান করায় জব্দকৃত গাড়ি তিনটির লাকড়ি ও কাঠ ব্যাবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বন আইনে মামলা রুজু করা হইবে।

এদিকে কাঠ ব্যাবসায়ী ওসমান বলেন, আমাদের ব্যবসার সিজেন আরম্ভ হলে কাঠ ব্যাবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বন বিভাগের প্রত্যেক সেক্টরে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে ব্যবসার যাত্রা সুচনা করি। বর্ষা মৌসুমে কোন ব্যবসা হয় না, চারটি মাস ব্যবসা চলে বার মাসের মধ্য। এর উপর ভিত্ত করে বছর পার করতে হয় আমাদের সংসার। মাসিক মাসোহারা দেয়ার পরেও প্রতি জীপ (পিকাপ) দুইশ টাকা বড় পিকাপ (ট্রাক)পাঁচশত টাকা স্থানীয় বিট অফিসের নিযুক্ত নির্দিষ্টকরণ ব্যক্তিকে লাইন পাস হিসেবে ধার্য করা টাকা দিতে হয়। সরকারী লিজভুক্ত কাঠ হোক বা ঘরোয়া লাকড়ী হোক গাড়িপ্রতি টাকার বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। এর একটু এদিক ওদিক হলে পরবর্তী লাকড়ি বা কাঠের গাড়ি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনা, তখন ঐ গাড়ি রাস্তায় থামিয়ে স্থানীয় বিট অফিসে নিয়ে মোটা অংকের টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে আনতে হয়। নইতো ঐ গাড়িসহ বন আইনে মামলা জুড়ে দেয়া হয়। এককথায় যেমনি নাচায় তেমনি নাছি আর্থাৎ বন কর্মকর্তাগণ যাহা বলে কাঠ ব্যাবসায়ীদের জন্য তাহা অঘোষিত আইনে বিরাজমান। তার উপর চলছে স্পেশাল অভিযান নামের স্পেশাল বাণিজ্য,এ যেন মরার উপর খরা।

বানিয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আবুল কাশেম অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চকরিয়া,বন বিভাগ,মাসোহারা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist