প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
গোপন চিঠি : ২৩ বছর পর খোঁজ মিললো মা-বাবার
যুক্তরাষ্ট্রের হাডসনভিল থেকে সুদূর চীনের হাংজু শহর বারবার ভ্রমণ করেছেন কাটি পোহলার। ওই শহরের একটি ব্রিজের ওপর বহুদিন ধরে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন কিছু সময় অপেক্ষা করেন লিডা ও ফেংশিয়াং দম্পতি। তাদের সেই অপেক্ষারও অবশেষে অবসান হয়েছে। একটি গোপন চিঠির সূত্র ধরে লিডা ও ফেংশিয়াং দম্পতি ২৩ বছর পর খুঁজে পেয়েছেন তাদের সন্তানকে। আর মার্কিন মুলুকে দত্তক নেওয়া মা-বাবার কাছে বড় হওয়া কাটি পোহলার সন্ধান পেয়েছেন তার আসল জন্মদাতার। খবর বিবিসির।
ফেংশিয়াং বলেন, ‘ওর জন্মের তিন দিন পর আমি সকালে উঠে ওর জন্য দুধ বানালাম। ওকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকলাম। তারপর বাজারের দিকে হেঁটে গেলাম। ও ঘুমাচ্ছিল। তাই ও সেদিন কাঁদেনি। আমি ওর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে ওকে বিদায় জানালাম’-কাটির আশ্রয় হয়েছিল একটি অনাথ আশ্রমে। সেখান থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাডসনভিল শহরের কেন ও রুথ পোহলার দম্পতি। শ্বেতাঙ্গ পরিবারে বড় হওয়া চীনা শিশুটি প্রায়ই জিজ্ঞেস করত সে কোথা থেকে এলো?
রুথ পোহলার বলেন, ‘ও একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি কার পেট থেকে এসেছি? আমি কি তোমার পেট থেকে এসেছি? আমি ওকে বলেছিলাম-না, তুমি চীন দেশের এক নারীর পেট থেকে এসেছ। কিন্তু আমার হৃদয়ে তোমার জন্ম। কথাটা শুনে ও খেলতে চলে গেল। আমার এই জবাবে যেন ও সন্তুষ্ট হয়েছিল।’ কাটি আপাতত সন্তুষ্ট হলেও কৌতূহল তার মেটেনি। যে অনাথ আশ্রম থেকে কাটিকে দত্তক নিয়েছিলেন কেন ও রুথ পোহলার তারা সঙ্গে করে দিয়েছিলেন সাদা কাগজে লেখা একটি চিঠি। তাতে লেখা ছিল শিশুটির বাবা-মায়ের করুণ আর্তি।
ফেংশিয়াং সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘দারিদ্র্য এবং অন্য কিছু সমস্যার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে তোমাকে ফেলে যাচ্ছি। আমাদের ছোট্ট শিশু তোমাকে রাস্তায় ফেলে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না। তোমার মনের গভীরে কোথাও কোনোদিন যদি বাবা-মায়ের জন্য কোনো অনুকম্পার জন্ম হয়, তাহলে আজ থেকে ১০ অথবা ২০ বছর পর হাংজু শহরের ভাঙা ব্রিজটার ওপরে এসো।’
ফেংশিয়াং বলছিলেন, ‘২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট দিনটিতে আমি সেই ভাঙা ব্রিজটার ওপর অপেক্ষা করতাম। আমি জানতাম হয়তো তাতে কোনো আশা নেই তবুও আমি অপেক্ষা করতাম। যখন ওর সঙ্গে দেখা হবে তখন ওকে আমি কি-ই বা বলতে পারি। ওর কাছে যদি আমি হাজারো বার ক্ষমা চাই তা কি যথেষ্ট হবে?’
সম্প্রতি কাটির হাতে চিঠিটি দিয়েছিলেন তাকে দত্তক নেওয়া বাবা-মা। আর সেই চিঠির সূত্র ধরেই কাটি মিলিত হলেন তাকে জন্ম দেওয়া আসল বাবা-মায়ের সঙ্গে। ‘আমি বড় হওয়ার সময় তেমন কোনো প্রশ্ন করিনি। তবে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার জন্মদাতা বাবা-মা সম্পর্কে সে কতটুকু জানে। একদিন মা বলেছিল, একটা জিনিস অনেক আগেই তোমাকে দেওয়া উচিত ছিল’-জানালেন কাটি পোহলার।
‘আমার আসল বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়া নিয়ে আমার একটা ভয় ছিল। আমার মনে হতো, আমি যদি ওদের কোনোভাবে হতাশ করি। আমাকে ফেলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ওরা হয়তো একটা অপরাধবোধে ভুগেছে। আমি বুঝতে পারি ওরা কতটা কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছে।’
সেই কষ্টের অবশেষে বুঝি অবসান হলো। হাংজু শহরের সেই ভাঙা ব্রিজটা এখন আর ভাঙা নেই। কিন্তু সেটির ওপরই ২৩ বছর পর মিলিত হলেন কাটি ও তার জন্মদাতা বাবা-মা।
পিডিএসও/তাজ