reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ জুলাই, ২০১৭

মাত্র ৫ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দিয়েছিল যে শিশু

সবচেয়ে অল্প বয়সে মা হয়েছে এমন একটি মেয়ের বয়স কত হতে পারে ভাবতে গেলে সেটা বড় জোর ৯/১০ বছরে গিয়ে ঠেকবে। স্বাভাবিকভাবে কেউ কি ভাবতে পারে মাত্র ৫ বছরের শিশুও সন্তানের জন্ম দিয়েছিল!

ব্যাপারটা অবাক করার মতো হলেও সত্যি যে, মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই মা হয়েছিল ‘লিনা মেডিনা’ নামের এক শিশু। জন্মদানের সময় তার বয়স ছিল পাঁচ বছর সাত মাস। জন্ম দেওয়া সন্তানটি ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ এবং এমনকী সেই সন্তান ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচেও ছিল। গর্ভধারণ অবস্থায় বাবা-মা তার অস্বাভাবিক পেট দেখে মনে করেছিলেন, পেটে বুঝি টিউমার হয়েছে। পরে ডাক্তার জানায় মেয়েটি গর্ভবতী। এমন খবরে বাবা-মা তো একদম থ!

পরিচয় লিনা মেডিনা (Lina Medina) ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পেরুর হানকেভ্যালিকায় জন্মগ্রহণ করেন। মেডিনাই এখন পর্যন্ত সফলভাবে সন্তান জন্মদানকারিণী সর্ব-কনিষ্ঠ মা। বর্তমানে তার বয়স ৮৩ বছর। তিনি পেরুর লিমা শহরে বসবাস করছেন।

প্রথম দিকের কথা মেডিনার বয়স যখন পাঁচ, তখন তার বাবা-মা পেটের অস্বাভাবিক আচরণ খেয়াল করেন। পেটের আকার ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়াতে তাকে নিয়ে এলেন হাসপাতালে। বাবা-মায়ের ধারণা ছিল পেটে টিউমার হয়ে থাকবে হয়ত। টিউমারের কারণে পেট ফুলে আছে। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার জানায় সে সাত মাসের গর্ভবতী।

এমন ঘটনা দেখে ডাক্তার নিজেও কিছুটা অবাক হন। নিজের হাতে পরীক্ষা করে দেখার পরেও মনে হচ্ছিল কেমন যেন একটা অনিশ্চয়তা রয়ে গেল। এত ছোট শিশুর মা হওয়ার ঘটনায় অবাক হওয়ারই কথা। নিশ্চিত হবার জন্য তিনি আরো একজন বিশেষজ্ঞের কাছে মেডিনাকে দেখান। ওই বিশেষজ্ঞ তখনকার সময়ে খুব বিখ্যাত ছিলেন। তিনিও একই কথা জানালেন, মেয়েটি গর্ভবতী।

এ খবর ওই সময়কার কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এরকম খবরের চাহিদা থাকে। এ খবর জানার পর মেডিনাকে নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়।

এরপর ১৯৩৯ সালের ১৪ মে মেডিনা সিজারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এত অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো উপযুক্ত পেলভিস তার ছিল না। থাকার কথাও নয়। সে কারণে সিজারিয়ানের আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

এক গবেষণায় বলা হয়, তিন বছর থেকেই মেডিনার নিয়মিত ঋতুস্রাব হতো। অন্য আরেক প্রতিবেদন বলা হয়, আড়াই বছর বয়স থেকেই তার ঋতুস্রাবের শুরু। এটা কীভাবে সম্ভব! এখানেই শেষ নয়, প্রতিবেদনে বলা হয়, চার বছর বয়স থেকেই তার স্তনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হতে থাকে। বয়স যখন পাঁচ বছরের মাঝামাঝি, তখন তাকে গর্ভবতী মায়ের মতো দেখায়। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার দেখতে পান, তার মাঝে মা হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে।

তার সন্তানটি জন্ম দেওয়া ছেলে সন্তানটি সুস্থভাবেই ভূমিষ্ঠ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ওজন ছিল আড়াই কেজির ওপরে (২.৭ কেজি)। কিছুদিন পর মেডিনার পরিবার তাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসেন এবং সিদ্ধান্ত নেন, নবজাতক তার মাকে বোন হিসেবে জানবে। ১০ বছর পর্যন্ত সন্তান তার মাকে বোন বলেই ডাকতো। সুস্থভাবেই বেড়ে ওঠে। কিন্তু ৪০ বছর বয়সে বোন ম্যারো (Bone Marrow) রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করে। উল্লেখ্য, মা লিনা মেডিনা এখনো বেঁচে আছেন।

পরবর্তী জীবন মেডিনা কখনোই তার সন্তানের বাবা কে তা প্রকাশ করেনি বা করতে পারেনি। হয়ত এমন বয়সে বুঝতোও না, মা হতে কী কী যোগ্যতা লাগে। সন্তানের জন্য বাবারই-বা ভূমিকা কী!এই সন্তানের বাবা কে, তা আজ পর্যন্তও জানা যায়নি। এখনো রহস্যই থেকে গেছে। উল্লেখ্য, মেডিনার বাবাকে শিশু যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে মেডিনা একটি হাসপাতালে কাজ করেন। হাসপাতালের ডাক্তার যিনি তার সন্তান প্রসব সংক্রান্ত সবকিছু দেখাশুনা করেছিলেন, তার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি মেডিনার সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থাও করেন। বর্তমানে মেডিনা তার স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন। স্বামীর নাম রাওল জোরাডো।

কীভাবে সম্ভব? কেউ কেউ বলে থাকেন, এটা একটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু একজন ডাক্তার ওই সময়েই তাকে নিয়ে গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যে, এটি কোনো গুজব বা মিথ্যা ঘটনা নয়। তখনকার সময়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যে যে প্রযুক্তি ছিল, মোটামুটি সবই ব্যবহার করা হয়েছিল এ ঘটনায়। এর মধ্যে এক্স-রে আর বায়োপসিও আছে। ওই সময়ে মেডিনার কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছিল।

যেহেতু সন্তানের বাবা সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না, সে কারণে শিশু বয়সে মা হওয়ার ক্ষেত্রে দুটি কারণ অনুমান করা যায়- ১. অনাকাঙ্ক্ষিত যৌনতার শিকার; ২. ছেলেটি তার যমজ ভাই।

ছেলেটি কীভাবে যমজ ভাই হয় তার গর্ভ থেকে আসা সন্তান কীভাবে তারই যমজ ভাই হতে পারে, ব্যাপারটা একটু চমকপ্রদই বটে। পেটের ভেতর শিশুও সহোদর হতে পারে। এমন বিপত্তিকর শর্তে এমনকী একজন পুরুষের পেটেও সন্তান হতে পারে।

মায়ের পেটে যখন যমজ সন্তানের সৃষ্টি হয়, তখন দুটি আলাদা আলাদা ভ্রূণের সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ দুটি পাশাপাশি অবস্থান করে। পাশাপাশি অবস্থান করা দুই ভ্রূণের কোনো একটি ভ্রূণ তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণ খাদ্য-পুষ্টি গ্রহণ করে অপর ভ্রূণের চেয়ে সবল ও বড় আকারের হয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় কোনোভাবে ছোট ভ্রূণটি যদি বড় ভ্রূণের ভেতরে ঢুকে যায় বা বড়টি ছোটটিকে গ্রাস করে নেয়, তাহলে ভেতরে থাকা ভ্রুণটি আর বিকশিত হতে পারে না।

ছোটটিকে ভেতরে দমিয়ে রেখে বড়টি ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এবং এক সময় ভেতরে রেখেই মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে আসে। ছোটটি তখন খাদ্য গ্রহণ করে থাকে বড়টির দেহ হতে। বড়টি যখন বাইরের পৃথিবীতে খেলছে দুলছে, তখন ভেতরে ছোটটি অল্প অল্প করে আকারে বাড়ছে। দেখতে দেখতে একসময় সবাই লক্ষ করেন খেলাধুলা করে বাড়ানো ছেলে/মেয়েটির পেট ফুলে উঠছে ধীরে ধীরে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সবাই মনে করেন পেটে টিউমার হয়েছে। সমস্যার সমাধান না হলে একসময় প্রচুর ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনো করানো হলে দেখা যায় পেটে সন্তান।

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এই পদ্ধতিতে সন্তান নারীর পেটেও হতে পারে, আবার পুরুষের পেটেও হতে পারে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, এসব অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু পূর্ণ বিকশিত হয় না। ত্রুটিপূর্ণ ও অবিকশিত হিসেবে জন্ম দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশু বলতে যা বোঝায়, তাও হয় না।

এখানে আরো একটা কথা বলার থাকে, যদি ধরে নেওয়া হয়, শিশুটি কোনোভাবে বেঁচে গেল। সুস্থই রইলো কয়েক বছর, তবুও সে বায়োলজিক্যালি তার সন্তান নয়। শিশুটি হবে তার ভাই অথবা বোন। কারণ, তারা জমজ হিসেবে মায়ের পেটে উৎপত্তি লাভ করেছিল।

লিনা মেডিনার সন্তান জন্মের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে অনাকাঙ্ক্ষিত যৌনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। উইকিপিডিয়াতে দেখা গেছে, সেখানে এখন পর্যন্ত (নভেম্বর ২০১৬) ১১২ জনের তালিকা দেওয়া আছে। ১১২ জনের সবারই বয়স ১০ বছরের নিচে। ৭ বছর বা ৮ বছরে মা হওয়ার কথা শুনতে যতটা না অবাক লাগে, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি অবাক লাগে এটা দেখতে যে কারা সেই সন্তানের বাবা। শুনলে হয়ত আরো খারাপ লাগবে যে, তালিকায় বাবা হিসেবে লেখা আছে ‘হার সিক্সটি নাইন ইয়ার্স ওল্ড গ্র্যান্ড ফাদার’ ‘ব্রাদার’ ‘কাজিন’ ‘আংকেল’ ‘ফ্রেন্ড’ ‘সিস্টার্স বয়ফ্রেন্ড’ ‘নেইবার’। সবচে আতঙ্কের নামটা মনে হয় ‘হার ফাদার’। এই শব্দটা বেশ কয়েকবার এসেছে, যা দেখলে চোখকে বিশ্বাস করানো যায় না।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
৫ বছর,সন্তান,জন্ম,শিশু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist