reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

না ঘুমিয়ে যেভাবে বিশ্বরেকর্ড

র‍্যান্ডি গার্ডনার একটানা জেগে ছিলেন ১১ দিন। এই রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি

১৯৬৪ সালের ৮ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোর এক স্কুলবালক বিরাট হইচই ফেলে দিয়েছে। একটানা ১১ দিন না ঘুমানোর বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছে ১৭ বছরের র‍্যান্ডি গার্ডনার। পুরো ঘটনাটি শুরু হয়েছিল স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় কী করা যায়, সেরকম একটি ভাবনা থেকে। র‍্যান্ডি এবং তার বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা মানুষের ঘুম নিয়ে কোন একটা পরীক্ষা চালাবে। সেই বন্ধুদের একজন ব্রুস ম্যাকালিস্টার।

‘আমরা ছিলাম খুবই সৃষ্টিশীল কিছু তরুণ। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। বিজ্ঞান মেলায় দেখানোর জন্য আমরা কিছু একটা করার কথা ভাবছিলাম। আমরা প্রথমত দেখতে চেয়েছিলাম মানুষ যদি না ঘুমায়, তাহলে এর ফলে তার কোন আধিভৌতিক ক্ষমতা তৈরি হয় কীনা। আমরা বুঝতে পারলাম এটা করা কঠিন। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, মানুষকে যদি ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে সেটার কি প্রভাব পড়ে তার সজ্ঞান আচরণে কিংবা বাস্কেটবল খেলায় কিংবা অন্য যে কোন কাজে। সেটাই আমরা দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

ব্রুস এবং তার বন্ধু র‍্যান্ডি গার্ডনার সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা একটানা জেগে থাকার যে বিশ্ব রেকর্ড, সেটা ভাঙবেন। তখন এক্ষেত্রে বিশ্বরেকর্ডটি ছিল হনলুলুর এক ডিস্ক জকি বা ডিজে'র। একটানা ২৬০ ঘণ্টা অর্থাৎ ১১ দিনের একটু কম সময় জেগে ছিলেন তিনি। উইলিয়াম ডিমেন্ট তখন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ গবেষক। স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি তার নজর কাড়লো।

‘আমি এ ঘটনার কথা প্রথম পড়ি সংবাদপত্রে। সান ডিয়েগোর পত্রিকায় এই ছেলেটাকে নিয়ে একটা খবর বেরিয়েছিল। সে নাকি না ঘুমিয়ে একটানা জেগে থাকার একটা নতুন রেকর্ড করতে চায়। কাজেই আমি সাথে সাথে ছেলেটার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। যাতে করে আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারি এবং দেখতে পারি কিভাবে ব্যাপারটা কাজ করছে।’

উইলিয়াম ডিমেন্ট এখন ক্যালিফোর্ণিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক। বিশ্বে ঘুম নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে তাকে পথিকৃৎ বলে মনে করা হয়। র‍্যান্ডি গার্ডনার এবং তার বন্ধু ব্রুস ম্যাকালিস্টার এবং অন্যরা মিলে ঘুম নিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন।

‘আমরা একটা কয়েন দিয়ে টস করে ঠিক করছিলাম, একটানা জেগে থাকার এই রেকর্ডটি কে করবে। আমি খুশি ছিলাম যে র‍্যান্ডির ভাগ্যেই এই দায়িত্বটা পড়লো। আমি হয়তো ওর চেয়ে অনেক আগেই ঝিমিয়ে পড়তাম। কিন্তু তখনো আমরা আসলে একরকম নির্বোধই ছিলাম, বলতে পারেন নিরেট গাধা। র‍্যান্ডিকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাকেও ওর সঙ্গে জেগে থাকতে হচ্ছিল। ওর ওপর নানা ধরণের পরীক্ষা চালাতে হচ্ছিল। কিন্তু তিন রাত ধরে নির্ঘুম থাকার পর একদিন দেয়ালের ওপর গিয়ে টলে পড়লাম। সেই দেয়ালের ওপরই তখন আমি নোট লিখছিলাম। তখন আমরা বুঝতে পারলাম, অন্য কাউকে এই কাজের জন্য নিয়ে আসতে হবে। তখন আমাদের আরেক বন্ধু জো মার্সিয়ানোকে অনুরোধ করলাম সে এই কাজে যোগ দিতে পারে কিনা। জো রাজী হলো।’

আর ঠিক ঐ একই সময়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উইলিয়াম ডিমেন্টও এসে যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে। উইলিয়াম ডিমেন্ট বলছিলেন, এতে যেন কিছুটা স্বস্তি পেলেন র‍্যান্ডির বাবা মা।

‘সেসময় গোটা দুনিয়ায় সম্ভবত আমিই একমাত্র গবেষক, যার কিছু কাজ ছিল এই ঘুম নিয়ে। র‍্যান্ডির বাবা-মা খুব হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন যে আমি এই কাজে যুক্ত হয়েছি। এই একটানা না ঘুমানোর ফলে র‍্যান্ডির কোন ক্ষতি হবে বলে আশংকা করছিল তার বাবা-মা। মানুষ যদি একটানা দীর্ঘ সময় না ঘুমায়, তাহলে এর ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নের কোন মীমাংসা তখনো হয়নি।’

এরআগে বিড়ালের ওপর এধরণের গবেষণা হয়েছিল। কিছু বিড়ালকে ১৫ দিন পর্যন্ত জাগিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরপর বিড়ালগুলো মারা যায়। ব্রুস ম্যাকালিস্টার বলছেন, তবে সেই পরীক্ষার সঙ্গে তাদের পরীক্ষার একটা পার্থক্য ছিল।

‘কিন্তু সেসব বিড়ালকে আসলে জাগিয়ে রাখা হয়েছিল নানা রকম রাসায়নিক প্রয়োগ করে। তখনো কেউ জানতো না যে সে কারণেই আসলে বিড়ালগুলো মারা গিয়েছিল। র‍্যান্ডি মাঝে মধ্যে কোক খেত। কিন্তু এ ছাড়া আর কিছু নয়। ডেক্সিড্রিন, বেনযিড্রিন বা এ জাতীয় কোন উদ্দীপক ঔষধ কিন্তু র‍্যান্ডি নেয়নি।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যুক্তরাষ্ট্র,বিজ্ঞান,বিচিত্র,ঘুম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist