প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮

বালুর প্রাসাদের এক রাজা

মাথায় মুকুট, হাতে রাজদণ্ড, কী নেই এই রাজার? তবে তার প্রাসাদটা অন্যরকম। বালু দিয়ে তৈরি। হ্যাঁ, সত্যিকারেই তিনি বালুর প্রাসাদে বাস করেন। আর এই বালুর প্রাসাদের রাজা মার্সিও মাতোলিয়াস। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে বাহা দা চিঝুকা সাগরসৈকতে দেখা মিলবে এ রাজার। চাইলেই হাসিমুখে প্রাসাদের সামনে পর্যটকদের সঙ্গে ছবি তোলেন মাতোলিয়াস। এই রাজা কিন্তু কাজও করেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সযত্নে বেলচা দিয়ে প্রাসাদের মেরামতকাজ করেন, ভঙ্গুর বালুর প্রাসাদ যাতে ঝড়-তুফানে ভেঙে না যায়।

রিওর পশ্চিমে বাহা দা চিঝুকা সাগরসৈকত সম্পদে ভরপুর। সেখানেই মাতোলিয়াস গড়েছেন বালুর প্রাসাদ। কাছেই সাগর। জানুয়ারি মাসের প্রচণ্ড গরমে সাগরে স্নান করছিলেন অনেকে। তাদের ভাষ্য, ২২ বছর ধরে নিজের তৈরি প্রাসাদে বাস করছেন মাতোলিয়াস। ৪৪ বছরের মাতোলিয়াস প্রাসাদ ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেন না। তাই ভঙ্গুর এই প্রাসাদ টিকিয়ে রাখতে কোদাল, ছুরি নিয়ে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যান।

মাতোলিয়াস আনন্দের সঙ্গে বলেন, ‘সাগরের সামনে বসবাসের জন্য লোকদের অনেক বেশি ভাড়া গুনতে হয়। কিন্তু আমার কোনো ভাড়া লাগে না। আমি এখানে আনন্দেই থাকি।’ মাতোলিয়াস অবিবাহিত। সঙ্গে আর কেউ নেই। তার প্রাসাদভরা বই। গলফ ক্লাবে যাওয়া এবং মাছ শিকার করা তার শখ। প্রাসাদের ভেতরে কোথায় ঘুমান মাতোলিয়াস? মাটিতেই স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে কাজটা সেরে নেন। তার শৌচাগার হিসেবে ৩০ মিটার দূরে জেলেঘাটের একটি বাথরুম ব্যবহার করেন। মাত্র ১ ডলারে গোসলও করা যায়। ছোটখাটো এসব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান না মাতোলিয়াস। তবে যখন খুব গরম পড়ে, তখন কষ্টটা বেড়ে যায়। সূর্যের তাপে বালু খুব গরম হয়ে যায়। তখন আর প্রাসাদের ভেতরে ঘুমাতে পারেন না মাতোলিয়াস। চলে যান বন্ধুর বাসায়।

ব্রাজিলের দক্ষিণ থেকে ভাগ্য অনুসন্ধানে রিওতে এসেছিলেন মাতোলিয়াস। কিন্তু শুরুতে কষ্ট ছিল। রাস্তায়ই ঘুমাতে হতো তাকে। এভাবেই কষ্টে কষ্টে জীবন কাটছিল। এক বন্ধু মাতোলিয়াসকে বালুর প্রাসাদ বানানো শেখান। এরপরই পরিস্থিতি বদলে গেল।

বালুর প্রাসাদ গড়ার কৌশল নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেন মাতোলিয়াস। ব্রাজিলের স্বনামধন্য স্থপতি নিমায়া আর গোদি তার হিরো। তাদের নকশার আদলেই বানালেন প্রাসাদ। রিও ডি জেনিরোর মেয়র এ নিয়ে কোনো সমস্যা করেননি বলে জানালেন।

একাকী জীবন ধারণের জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। পর্যটকরা তাকে দেখে মজা পান। ছবি তোলেন। তারা খুশি মনে যা দেন, তা-ই দিয়ে বেশ চলে যায়। প্রাসাদের প্রবেশপথে একটি অনুদান বাক্সও রেখেছেন। সেখানেও জমা পড়ে অর্থ। তবে মাঝে মাঝে সেটি চুরি হয়ে যায়। তখন ভারি মন খারাপ হয় মাতোলিয়াসের।

মাঝেমধ্যে একটি বিপণনকেন্দ্র থেকে মাতোলিয়াসের কাছে অর্থ আসে। বিশেষ কোনো ঘটনা বা অনুষ্ঠানের জন্য চমৎকার বালুর ভাস্কর্য গড়ে দেওয়ার অনুরোধ আসে। কিন্তু মাতোলিয়াস চান না তার এত কষ্টের কাজগুলো ক্ষণস্থায়ী হোক। রূপকথার মতো এমন এক বালির প্রাসাদ গড়তে যেখানে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা লাগে, সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটের বৃষ্টি এই প্রাসাদকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আশাবাদী মাতোলিয়াস বালুর সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে একটি প্রাসাদ বানাতে চান, যেটা ভঙ্গুর হবে না। ছুরি ও কোদাল দিয়ে ক্রমাগত মেরামত করে ভঙ্গুর বালুর প্রাসাদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যান মাতোলিয়াস। রূপকথার রাজপ্রাসাদকে টিকিয়ে রাখার এই কাজে কোনো ক্লান্তি নেই তার।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বালুর প্রাসাদ,রাজা,ব্রাজিল,সাগরসৈকত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist