হাসান ইমন
হকারদের বিদেশে পাঠানোর কার্যক্রম অনিশ্চিত
রাজধানীর ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কয়েক দফা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। এতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। এক পর্যায়ে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নতুন উদ্যোগ। তাহলো ইচ্ছুক হকারদের বিদেশে পাঠিয়ে কর্মসংস্থান করে দেওয়া। কিন্তু সে উদ্যোগ কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। আলোর মুখ দেখেনি। এই কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে বলতে পারছেন না কর্মকর্তারাও। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই হকারদের বিদেশ পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হবে। অন্যদিকে বিদেশ পাঠানো কার্যক্রম অনিশ্চতার মুখে পড়ায় হকাররা আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটপাতে বসছেন।
রাজধানীর মূল সড়ক ও ফুটপাত দখল করে হকারদের বসা বন্ধ করতে বারবার অভিযান পরিচালনা করে কোনো ফল পায়নি সিটি করপোরেশন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতেই রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। জনবহুল এলাকা গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন ও নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়োগ করা হয় স্বেচ্ছাসেবক ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের। এতে অনেকটা সফল হয় সংস্থাটি। এরপর নগর ভবন ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন হকাররা। কিন্তু সিটি করপোরেশন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
পাশাপাশি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করে ডিএসসিসি। সংস্থাটি জানায়, যদি কোনো হকার ফুটপাত ছেড়ে কর্মসংস্থানের জন্য চাকরি করতে বা বিদেশ যেতে চান তাহলে সিটি করপোরেশন তাদেরকে চাকরি দেবে বা বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। করপোরেশনের এমন ঘোষণার পর উচ্ছেদ হওয়া হকারদের অন্তত ৬৯ জন বিদেশ যেতে আবেদনও করেন।
সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্তের পর চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, পুনর্বাসনের জন্য হকারদের আবেদন পাওয়ার পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রথম অবস্থায় কয়েকজন হকার নেতাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও করপোরেশনের সে সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা থাকেনি। সিটি করপোরেশন যাদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে তাদের অধিকাংশই হকার নন। যে কারণে প্রকৃত হকারদের পক্ষ থেকে করপোরেশনের এ উদ্যোগে সাড়া মিলছে না।
হকার নেতারা জানান, পুনর্বাসন কার্যক্রমের মধ্যে শুধু ১২ জুন তাদের নিয়ে একটি সেমিনার করেছে ডিএসসিসি। এ ছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান কাজ তাদের চোখে পড়েনি। সিটি করপোরেশনের এমন খামখেয়ালিতে আর্থিকভাবে ঝুঁকিতে আছে হকারদের ১০ হাজার পরিবার।
বিদেশ গমনে সাধারণ হকারদের আগ্রহ না দেখানোর কারণ হিসেবে ডিএসসিসির ধীরগতির কাজকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। উচ্ছেদের পর প্রায় বছর পেরিয়ে গেলেও হকারদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সংস্থাটি।
ডিএসসিসির উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত হকারদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল পুনর্বাসন করা। কিন্তু পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদের বিষয়ে মেয়র যে কঠোরতা দেখিয়েছেন তা অযৌক্তিক। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে ফুটপাত থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়েছেন। অনেকে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। আবার টাকার অভাবে অনেক হকারের ছেলেমেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হকারদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রকল্পে হকার পুনর্বাসনের জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে কম খরচে বিদেশ পাঠানো, স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়াসহ অন্য বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প অনুমোদন পেলেই পুনর্বাসন কাজ আরো দ্রুত করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, স্টেডিয়াম গেট, জিপিও, পুরানা পল্টন মোড়, ফুলবাড়িয়া ও গোলাপশাহ মাজার এলাকায় জরিপ চালিয়ে সম্প্রতি দুই হাজার ৫০২ জন হকারের তালিকা তৈরি করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া নিউমার্কেট এলাকায় ৯৩৪ জন হকারের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে হকারদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যবসার ধরন ও স্থান ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করে। এরআগে হকারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। হকারদের পরিচয়পত্র দিলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত হকারদের সুবিধাজনক স্থানে পুনর্বাসন করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে কিছুদিন পর তাও স্থগিত হয়ে যায়।
পিডিএসও/হেলাল