নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

ঢাকায় অটোরিকশার ‘জিম্মিদশাকে’ গুডবাই!

‘একবার আমি জলঢাকা থেকে মাকে নিয়ে ঢাকায় আসি। ভোর ৫টায় গাবতলীতে নেমে মোহাম্মদপুর যেতে অটোরিকশা ঠিক করছি। সবার ভাড়া আকাশচুম্বী। এক চালক ভাড়া কমিয়েই যেতে রাজি হলেন। ভোরের সুনসান রাস্তা। কল্যাণপুর পার হলে চাকু-ছুরি বের করে সব হাতিয়ে নিয়েছেন ওই চালক। সেই থেকে অটোরিকশায় আমার ভয়।

কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর সারোয়ার জাহান বাদশা। প্রায় তিন মাস আগে আক্ষেপ নিয়ে এ কথাগুলো বলেন তিনি। তবে এখন রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। অটোরিকশাচালকদের এমন স্বেচ্ছাচারী আচরণ থেকে পরিত্রাণ দিচ্ছে নগরীতে চালু হওয়া অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা।

ঢাকায় প্রথম অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু করে শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম)। এরপর উবার, পাঠাও, চলো, আমার বাইক, আমার রাইড, ময়ূর, ওয়েজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের সেবা নিয়ে হাজির রয়েছে। অনেক অটোরিকশাচালক এখন রিকশাচালকদের মতোই ডেকে ডেকে যাত্রী নিচ্ছেন। এরই মধ্যে যাতায়াতে এ পরিবহনগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মানুষের কাছে। সিএনজি অটোরিকশার ‘জিম্মিদশা’ থেকে মুক্তির মাধ্যম ‘অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহন সেবা’ বলেই জানাচ্ছেন যাত্রীরা।

‘বিপদের সময় অটোরিকশাচালকরা কসাইয়ের ভূমিকা নিতেন’ অভিযোগ করে মিরপুর-১৪ নম্বরের বাসিন্দা নাছরিন আক্তার বলেন, ‘ঢাকার রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশার কোনো দরকারই নেই। এগুলো একেবারে উঠে গেলে খুশি হই। চালকদের সহানুভূতি দেখানোর মতো কোনো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। চলাচলে পদে পদে বিপদ। জরুরি সময়ে কসাইয়ের মতো ভাড়া নিতেন চালকরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হওয়ায় অটোরিকশার ট্রিপ কমে গেছে, চালকরা পড়েছেন বিপাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেক চালক রিকশাচালকদের মতোই ডেকে ডেকে যাত্রী নিচ্ছেন। দীর্ঘদিনের ভোগান্তিতে ক্ষিপ্ত স্মার্টফোন ব্যবহারকারী যাত্রীরাও চালকদের পাঠাও-উবারের ভয় দেখাচ্ছেন।

যাত্রীরা বলছেন, অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন চালকদের পরিচয় নিবন্ধিত হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত থাকা যাচ্ছে। অটোরিকশাচালকরা প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাতেন। রাইড শেয়ারিংয়ে শিক্ষিতরা জড়িত থাকায় যাত্রী হয়রানিও কমবে। অ্যাপস?ভিত্তিক পরিবহন সেবার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আবদুল বারী বলেন, ‘উবারে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাবতলীতে গেলাম, ১৮০ টাকা লাগল। শব্দহীন ও ঝাঁকিমুক্ত জার্নি। অটোরিকশা অনিরাপদ ও ঝামেলার, ভাড়াও বেশি চান চালকরা। মিটারে যাবে না, ভাড়া বাড়ায় দেন-কত দাবি! এখানে ভাড়া নিয়ে বার্গেনিংয়ের কোনো সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই।

তবে পাঠাও-স্যামে ভাড়া সাধ্যের মধ্যে হলেও উবারে একটু বেশি। উবারের ভাড়া একটু কমলে আরো জনপ্রিয় হবে।’ এদিকে অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ঢাকা জেলা কমিটির সদস্যসচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, ‘আমরাও অ্যাপসভিত্তিক সেবায় যেতে চাই। তবে যেভাবে অবৈধ অ্যাপস চালু হয়ে গেছে, তাতে আগামী ছয় মাস পর ঢাকায় অটোরিকশা বন্ধ হয়ে যাবে। চালক-মালিক সবাই মাঠে মারা যাবেন।’

ঢাকা মহানগর অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, ‘আমরাও সরকারের ঠিক করে দেওয়া নীতিমালাতেই সেবা দিতে চাই। তবে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবার সঙ্গে তো আমাদের নীতিমালা মিলবে না। আমাদের তো নির্ধারিত ভাড়া আছে। ওই ভাড়া আর আমাদের ভাড়া তো এক হবে না।’

কোনো অটোরিকশা অ্যাপে চললেও বর্তমান নিয়মে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া তারা নিতে পারবে না বলে জানান বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা মেনে চলতে হবে। অ্যাপসওয়ালারা কোনোভাবেই বর্তমানে যে ভাড়া আছে তার চেয়ে বেশি নিতে পারবেন না। একইভাবে ট্যাক্সিক্যাবে যে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে, তার থেকেও বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই।

"পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অটোরিকশা,রাইড শেয়ারিং,অ্যাপস,অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist