নিজস্ব প্রতিবেদক
অ্যাপসেবা : যাত্রীরা খুশি, অটোচালকরা বেকায়দায়
রাজধানীতে যাত্রীর ইচ্ছামতো গন্তব্যে যাওয়া এবং মিটার অনুযায়ী ভাড়া নেওয়ার শর্তে চালু হয়েছিল অটোরিকশা। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই শর্ত অমান্য করে ইচ্ছামতো গন্তব্যে যাওয়া, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত দাবিসহ নানা কারণে যাত্রীদের বিরক্তির কারণ হন এর চালকরা। দুই দফা বাড়িয়ে ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করার পরও তাদের অজুহাতের শেষ নেই। মিটারের বদলে ইচ্ছামতো ভাড়ায় যাত্রীদের যেতে বাধ্য করতেন তারা। এ কারণে তাদের প্রতি জনক্ষোভও ছিল স্পষ্ট।
এই অবস্থায় অ্যাপভিত্তিক আন্তর্জাতিক সেবা উবার ঢাকায় গাড়ি এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল ভাড়া সেবা চালু হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি। শুরুতেই জনপ্রিয় হয় সেবা দুটি। শুরুতে উবার কেবল গাড়ি এবং পাঠাও মোটরসাইকেল সেবা দিত। এখন উবারে মোটরসাইকেল ভাড়া করা যাচ্ছে। পাঠাও মোটরসাইকেলের পাশাপাশি চলো, শেয়ার অ্যা মোটরসাইকেল (স্যাম), আমার বাইক, আমার রাইড, ময়ুর, ওয়েজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের সেবা নিয়ে হাজির হয়। অ্যাপভিত্তিক এসব সেবা চালু হওয়ার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশার প্রয়োজনীয়তা কমে যাচ্ছে। যাত্রী ওঠাতে পারছে না তারা। দিন দিন কমছে তাদের আয়।
যারা স্মার্টফোন চালান তারা ঘরে, অফিসে বা বিপণিবিতান থেকেই মুঠোফোনে ভাড়া করে ফেলেন যানবাহন। ঝক্কি, ঝামেলা নেই, চালকের সঙ্গে দরকষাকষি নেই, সবচেয়ে বড় কথা, চালক কোথাও যাবে কী যাবে না, এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসার কোনো কারণই নেই। ফলে যাতায়াতে টাকা খরচ করেও এত দিন সেবা পাচ্ছিলেন না, তারা এখন মহাখুশি। আর উল্টো পরিস্থিতি অটোরিকশাচালকদের। যাত্রীর ডাকাডাকি উপেক্ষার সুযোগ এখন তাদের নেই বললেই চলে। আর ব্যবহারও আগের চেয়ে ভালো করতে হচ্ছে। তার পরও ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না আগের মতো।
অটোরিকশার চালকরা বলছেন, উবারে একটা ধাক্কা এসেছে, এরপর মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবাগুলো চালু হওয়ার পর তাদের যাত্রী কমেছে অনেক বেশি। একজন যাত্রী হলে বেশির ভাগ সময় মোটরসাইকেলে চলে যান। তা ছাড়া ঢাকা জেলা ও প্রাইভেট অটোরিকশা চলাচল বেড়ে যাওয়ায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। অ্যাপনির্ভর এসব পরিবহনসেবা বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে ২৭ নভেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তাদের এই কর্মসূচির পাল্টায় অটোরিকশা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে। সিএনজি অটোরিকশার মালিক-চালকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মগবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তো সিএনজি অটোরিকশাওয়ালাদের কাছে জিম্মি ছিলাম। কোনো উপায় না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও তাতে চড়তে হতো। কিন্তু রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো আসায় আমাদের অনেকগুলো অপশন তৈরি হয়েছে। যখন চাইছি, তখনই চলে আসছে। আর ভাড়াও সাধ্যের নাগালে। এ কারণে এসব সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে। পিছিয়ে পড়ছে অটোরিকশা।’
অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা ‘পাঠাও’র প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন ইলিয়াস বলেন, “তাদের ‘ইউজার’ হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে পাঁচ লাখ মানুষ। তবে এখন কতজন আমাদের রাইড শেয়ার করছে, এটা প্রকাশ করা যাবে না।” স্যামের চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ কাসেমের কাছেও এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, এটা বের করা কঠিন। ব্যবসায়িক গোপনীয়তার কারণে কেউ এটা বলবে না। তবে রাইডের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন।
অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু হওয়ার পর আয় একেবারে কমে গেছে বলে জানালেন কয়েকজন অটোরিকশাচালক। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা চালুর কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ট্রিপ কমেছে বলে উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর অটোরিকশার মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রিপ কমলেও আপাতত ভাড়া কমাচ্ছি না। চালকদের জমাও কমাচ্ছি না। অবৈধ অটোরিকশার চলাচল বন্ধে আমরা একটি রিট করেছিলাম হাইকোর্টে। আগামী সপ্তাহে শুনানিতে পজিটিভ রায় পেলে এসব বন্ধ হবে।’
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, মিটারে না যাওয়ার অনেক অভিযোগ আছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুযোগ নিয়ে চালকরা যাত্রীদের কাছে গলা কাটা ভাড়া আদায় করেছে। এমন অভিযোগের প্রমাণ মেলায় অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। তাতেও কমেনি। এখন যাত্রীরাই অটোরিকশায় কম উঠছেন।
পিডিএসও/তাজ