প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
হুইট ব্লাস্ট ছত্রাক রোগ
বাংলাদেশ সীমান্তে গম চাষ নিষিদ্ধ করেছে ভারত
বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় গম চাষ নিষিদ্ধ করলো ভারতে। ভারতের কৃষি দফতর জানিয়েছে, আগামী দুই বছর বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় গম চাষ করা যাবে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে গমের ফসলে হুইট ব্লাস্ট নামে একটি ছত্রাক রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর কৃষি বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে ওই রোগ ভারতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলের যেসব এলাকায় এ বছর গম চাষ হয়েছিল, তা ইতোমধ্যেই জ্বালিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। এ জন্য মোট চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের ওপর কৃষি দফতরের বিশেষ নজর দিচ্ছে। কারণ সেখান থেকেই ভারতে রোগ ছড়ানোর সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ও সীমান্তবর্তী এলাকা হরিহরপাড়ার জনপ্রতিনিধি মোশারফ হোসেন বলছিলেন, ‘গত মৌসুমে শুধু আমাদের মুর্শিদাবাদ জেলায়ই প্রায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোনা গম এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার পাঁচটি ব্লকে এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ওই ফসল নষ্ট করে দিতে হয়েছে। প্রথমে কৃষকরা বুঝতেই চাইছিলেন না, কিন্তু পরে সরকারি ব্যবস্থায় সেই সব গম নষ্ট করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণও দিয়েছি আমরা।’
গত বছর বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেও একইভাবে গমের ফসল নষ্ট করা হয়েছে রোগ আটকাতে। আর পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় পরের দুই বছর যাতে কেউ গম চাষ না করেন, তার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রচার। কৃষি বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আক্রান্ত গমের বীজ ভারতে প্রবেশ করে থাকতে পারে।
হরিয়ানার কারনালে কেন্দ্রীয় গম ও বার্লি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিরোগ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক দেবেন্দর পাল সিংয়ের কাছে হুইট ব্লাস্ট রোগটি দক্ষিণ আমেরিকায় দেখা যায়, কিন্তু সেটি এই অঞ্চলে এলো কী করে তা জানতে চাওয়া হয়? তিনি জানান, ‘প্রথমে ব্রাজিলে গমের ফলনে এই ছত্রাক রোগ দেখা যায়। তারপর সেটি দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশেও ছড়ায়। এটা এশিয়ার এই অঞ্চলের রোগ নয়।
তবে বাংলাদেশ সম্প্রতি ওইসব দেশ থেকে সস্তায় গম আমদানি করেছে, কিছু চাষি হয়তো সেই গম বীজ হিসেবে ব্যবহার করেছেন আর তার থেকেই সে দেশে ওই রোগ ছড়িয়েছে।’ সে জন্যই সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই রোগটাকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানালেন ভারতের গম ও বার্লি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান এই কৃষিরোগ বিশেষজ্ঞ।
মোশারফ হোসেনও বলেন, এক শ্রেণির অসাধু বীজ ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে চোরাইপথে ছত্রাক রোগগ্রস্ত বীজ নিয়ে এসে থাকতে পারেন। আর একবার হুইট ব্লাস্ট রোগ ছড়ালে তা শুধু ওই জমি নয়, ধীরে ধীরে অন্যান্য জমিতে বোনা গমের ফলনকেও ক্ষতি করবে, নষ্ট হবে মাটিও। অন্যদিকে কৃষিরোগ বিশেষজ্ঞ দেবেন্দর পাল সিং জানান-শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রতিটি রাজ্যেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য অঞ্চলে গম চাষ খুব একটা হয় না, তাই মূল নজরটা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলায়।
পিডিএসও/তাজ