নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোয় এই ট্যাক্স ধার্য করা হবে

বাড়ির স্টাইল দেখে ট্যাক্স : অর্থমন্ত্রী

বর্তমান বাজেটে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আইন কার্যকর না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতির আশঙ্কা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। সে কারণে এ ঘাটতি মোকাবিলা করতে বাড়ির স্টাইল অনুযায়ী ট্যাক্স আদায়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘নতুন কৌশল করে বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা চিন্তা করছে সরকার। তাই এবার আগেভাগেই বাজেট সংশোধন করা হবে। যারা বড় প্রাসাদ-বাড়ির মালিক তাদের সেই বাড়ির ওপর কিছু কর বাড়ানো হতে পারে।’

উল্লেখ্য, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় ঘটতি কীভাবে মেটাবেন-জানতে চাইলে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘নতুন কৌশলে এ ঘাটতি পূরণ করা হবে।’

নতুন কৌশল কী হবে?-জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগে পরিকল্পনা করেও বাড়িওয়ালাদের ট্যাক্সের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এবার তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি। আর সেটি হচ্ছে, শুরুতে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোয় নির্মিত বাড়ির স্টাইল দেখে বাড়িওয়ালাদের ট্যাক্স ধার্য করা হবে। ধার্যকরা ট্যাক্স নিয়ে বাড়িওয়ালাদের আপত্তি থাকলে তা জানাতে তারা অবশ্যই কর অফিসে আসবেন। আর তখনই কর কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তার ওপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের ট্যাক্স ধার্য করা হবে। আর এভাবেই আয় হবে অনেকটা পরিমাণ রাজস্ব।’

জানা গেছে, এ ছাড়াও রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের বিভাগীয় শহরগুলোয় বসবাসকারী নাগরিক (৪০ বছরের নিচে) এবং যাদের আয় ভালো তাদেরও ট্যাক্সের আওতায় আনা হবে। আর তরুণদের ট্যাক্স দিতে উৎসাহী করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়া এবং রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সরকার মনে করছে, সর্বত্র ১৫ শতাংশ না ধরে এভাবে ভ্যাট হার পুনর্বিন্যাস করা গেলে রাজস্ব আয় বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ২৯ লাখ নাগরিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও সবাই ট্যাক্স দেন না। রিটার্ন দাখিলকারীদের মধ্য থেকে ট্যাক্স দেওয়ার নাগরিকের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগের অংশ হিসেবে এসব পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতেও সরকার সহায়তা করছে। সরকার বিশ্বাস করে এসব উদ্যোক্তারাই এক সময় সেরা করদাতা হবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০০৯ সালে ভূমিকর বাড়ানো হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবার ভূমিকর বাড়ানোর একটা কৌশল বের করতে হবে। কারণ দেশের সর্বত্র সরকারি হারের অনেক বেশি দামে জমি কেনাবেচা হয় এবং তা আমাদের নাগরিকরাই কেনেন। রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকার আয়কর ও করপোরেট করের ওপর জোর দেবে, পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির ওপর থেকে ট্যাক্স কমানো হবে, চিকিৎসকদের ওপর আয়কর আদায়ে জোর দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়। এতে রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় চিন্তিত অর্থমন্ত্রী। এ জন্য বাজেটের অর্থায়ন ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে একটি কর্মপরিকল্পনা চেয়েছিলেন তিনি। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই রাজস্ব আদায়ের একটি কর্মপরিকল্পনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনবিআর। এতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই রাজস্ব আদায় করবে সরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই কর্মপরিকল্পনা বলা হয়, ভ্যাটের আওতা বাড়াতে হবে এবং বকেয়া আদায় বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ জন্য সিগারেট ও বিড়ি খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বিমানের টিকিট থেকে আবগারি শুল্ক হিসাবে ৫০০ কোটি টাকা, ফাস্টফুডের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০০ কোটি টাকাসহ মোট পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলা ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে পাওনা ২২ হাজার কোটি টাকা আদায় করার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে ওই কর্মপরিকল্পনায়।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘যেকোনো ঘাটতি মেটাতেই কৌশলী হতে হয়। সে ক্ষেত্রে বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার যদি কৌশলী হয় তাহলে তো আর কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে সেটি যাতে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।’ উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা এবং অনুদানসহ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ছয় হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাড়ির ট্যাক্স,ট্যাক্স,রাজধানী,ভ্যাট আইন,মূল্য সংযোজন কর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist