নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭

বিদেশের বন্দরে আটকে আছে কনটেইনার, ক্ষতির মুখে আমদানিকারকরা

একাধিক দেশের বন্দরে আমদানি পণ্যভর্তি শত শত কনটেইনার আটকে আছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারবাহী ফিডার জাহাজ বার্থিং সিরিয়াল না পাওয়া, বহির্নোঙরে দিনের পর দিন আটকে থেকে অলস সময় কাটানো এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধীরগতিসহ নানা কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে আমদানিকারকরা।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বন্দরে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী প্রায় ২৫ হাজার আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। আমদানি-রফতানি ব্যবসা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বিদেশি বন্দরে আটকেপড়া আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার দ্রুত দেশে আনতে বিদ্যমান জাহাজের বাইরে আরো ফিডার জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া জরুরি। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে তার অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে জাহাজ সঙ্কটের কারণে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোতে একেকটি কনটেইনার ৪ থেকে ৫ সপ্তাহ পড়ে থাকছে। আর ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কতিপয় ফিডার জাহাজ পরিচালনাকারী শিপিং লাইন আমদানিমুখী কনটেইনারের ওপর সারচার্জ আরোপের পঁাঁয়তারা করছে।

সূত্র জানায়, কলম্বো, সিঙ্গাপুরসহ ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোতে এদেশের আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের স্তূপ জমেছে প্রধানত তিনটি কারণে। প্রথমত, যে হারে আমদানি বাড়ছে সে হারে বন্দরের হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়েনি। জাহাজের সংখ্যাও কম। দ্বিতীয়ত, বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে বেশি ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের একাধিক জেটিতে ঢুকতে পারছে না। আর কম ড্রাফটের জাহাজে করে কনটেইনারও আসছে কম। তৃতীয়ত, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন কোনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে না। মূলত এসব কারণেই ফিডার জাহাজ পরিচালনাকারী শিপিং লাইনগুলো আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার পরিবহন সামাল দিতে পারছে না। স্বাভাবিক সময়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং নেওয়ার পর আমদানি পণ্য খালাস ও রফতানি পণ্য লোড করে ফিরে যেতে সময় লাগে গড়ে তিন থেকে চার দিন। অথচ কয়েক মাস ধরে পণ্যভর্তি একেকটি জাহাজকে চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং পেতে বহির্নোঙরেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৫ থেকে ৭ দিন। ওই কারণে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোতে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জমে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কলম্বোর বন্দরে এভারগ্রিন ও মার্কস লাইন শিপিংয়ের বিপুলসংখ্যক কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। একইভাবে সিঙ্গাপুর বন্দরেও আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জমে আছে।

সূত্র আরো জানায়, আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার যথাসময়ে দেশে আনতে একাধিক ফিডার জাহাজ পরিচালনাকারী শিপিং

কোম্পানি নতুন জাহাজ নামানোর অনুমতি চাইলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিমত নতুন জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিলে এমন পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেওয়া সম্ভব হতো। পাশাপাশি আমদানিকারকরাও বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেত। তবে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান কাল বা টার্ন এরাউন্ড টাইম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কিংবা বিদ্যমান জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থার স্বার্থেই বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে না।

এদিকে বন্দর সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র মতে, বিগত ৫ বছরে দেশে আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়েনি। তাছাড়া এমনিতেই চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ জট লেগে থাকে। তার ওপর তার ওপর নতুন কোনো জাহাজের অনুমতি দিলে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম (একটি জাহাজ পণ্যভর্তি করে এনে তা খালাস ও রফতানি পণ্য লোড করে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত যে সময়)। ওই কারণে নতুন জাহাজের অনুমতি দিচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বহির্নোঙরে আমদানি পণ্যভর্তি অপেক্ষমাণ জাহাজকে। বার্থিং সিরিয়াল দিতে পারছে না। ফলে যেসব জাহাজ বার্থিং পাচ্ছে সেসব জাহাজের কনটেইনার খালাসের ক্ষেত্রেও রয়েছে ধীরগতি। আমদানি পণ্য নিয়ে আসা একেকটি জাহাজকে দিনের পর দিন বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যথাসময়ে ওসব জাহাজ ফিরে যেতে না পারায় বিদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী আমদানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ জমছে।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist