গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭

কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি বিলাস

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প : * জিপ ও পিকআপ কেনা হচ্ছে আড়াই কোটি টাকায় * টানেলের ধারণা নিতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন দুই কর্মকর্তা

কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ প্রকল্পের কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকলেও গাড়ি বিলাসের দিকে ঝুঁকেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানা গেছে, প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য ৩টি জিপ ও ২টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাবে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এছাড়া টানেল সম্পর্কে ধারণা পেতে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে দু’জন কর্মকর্তাকে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ইফতেখার কবির বলেন, নির্মাণ কাজের আগে অনেক আনুষ্ঠানিকতা থাকে। সেগুলো চলছে। ঋণচুক্তি কার্যকরের অংশ হচ্ছে ইফেকটিভনেস অব প্রজেক্ট। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে সাইট অফিস, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবাসস্থল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। এছাড়া টানেলের ডিজাইনের কাজ চলছে এখন। এই এক বছরের মধ্যে ডিজাইনপর্ব শেষ হবে। ডিজাইন অ্যান্ড বিল্ট দুটিই বাস্তবায়নের কাজ চলছে একসঙ্গে।

সেতু বিভাগ জানিয়েছে, প্রকল্পের অনুমোদিত জনবল ২৯। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জনবল বাড়ানো হবে। প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য ৩টি জিপ গাড়ির জন্য ১ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ২টি ডাবল কেবিন পিকআপ ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনার জন্য চলতি সপ্তাহে সম্মতি পেয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। অর্থ বিভাগের এ সম্মতির জন্য অনেক দিন ধরে চিঠি চালাচালি চলছিল।

সূত্রমতে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পারফরমেন্স গ্যারান্টি, মোবিলাইজেশন পেমেন্ট গ্যারান্টি এবং রিটেনসন মানি গ্যারান্টি সম্প্রতি জমা দেওয়া হয়েছে কর্ণফলী টানেলের প্রকল্প দফতরে। এ তিনটি গ্যারান্টি নিয়মানুযায়ী, এখন ভেরিফিকেশন করা হবে চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে। এজন্য সেতু বিভাগ থেকে চিঠি যাচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্মাণাধীন টানেল সম্পর্কে ধারণা পেতে সিঙ্গাপুর পাঠানো হচ্ছে দুই কর্মকর্তাকে। টানেল নির্মাণের কারিগরি দিক এবং সংশ্লিষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর আয়োজিত কনফারেন্সে অংশ নেবেন তারা। আগামী ২৭-২৯ মার্চ সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘থার্ড অ্যানুয়াল আরবান আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেস অ্যান্ড টানেলিং’ শীর্ষক কনফারেন্স। এ দুই কর্মকর্তার বিদেশ সফর সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় বহন করা হবে টানেল নির্মাণ প্রকল্প থেকে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সাইটে বিদ্যুৎ পৌঁছানো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। টানেল প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রাক্কলন তৈরি করতে ২০১৫ সালের ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে চিঠি দিয়েছিল সেতু কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে গত বছরের (২০১৬) ৩১ আগস্ট আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। এরপর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা অফিস থেকে চাহিদানুযায়ী প্রস্তাব তৈরি করা হয়। টানেল প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারা ও পতেঙ্গা অংশে প্রকল্প চলাকালে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ লাইন, সাবস্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ বাবদ খরচ ধরে প্রস্তাব পাঠানো হয় বিদ্যুৎ বোর্ড থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, আনোয়ারা প্রান্ত বা পূর্ব প্রান্তে লাগবে ৪৭ কোটি ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬৪ টাকা। আর পশ্চিম প্রান্ত বা পতেঙ্গায় লাগবে ৩১ কোটি ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ১২৯ টাকা। এসব টাকার যুক্তি প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, সিইউএফএল ফিডারটি প্রায় ৪২ কিলোমিটার লম্বা ও দীর্ঘদিনের পুরাতন। বর্তমানে লাইনটি প্রায় পূর্ণ লোডে চলছে। এই লোড ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার আশঙ্কায় টানেলের পূর্ব প্রান্তে সংযোগ দেওয়া যাবে না। অধিকন্তু অতিরিক্ত লোডেড সংযোগ করলে সংশ্লিষ্ট শিকলবাহা গ্রিড সাব স্টেশনটি ওভারলোডেড হবে। অন্যদিকে নেভাল একাডেমি ও এয়ারপোর্টে ১১ কেভি লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ৩৩ কেভি লেভেলে ৫ মেট্রিকটন এর অধিক চাহিদার সংযোগ দেওয়া হয়। তাই ১১ কেভি নেভাল একাডেমি এয়ারপোর্ট ফিডারের মাধ্যমে টানেলের পশ্চিম পাশেও সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই টানেলের পূর্বপান্তে শাহরীমপুর গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে এবং পশ্চিম প্রান্তের হালিশহর গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারে। শাহরীমপুর গ্রিড উপকেন্দ্রের ৩৩ কেভি সাইটে গ্যাস ইন্সুলেটেড সুইচগিয়ার (জিআইএস) থাকায় পূর্বপ্রান্তের ৩৩ কেভি সংযোগ লাইনের ইনকামিং ব্রেকার হিসেবে জিআইএস এবং হালিশহর উপকেন্দ্রের ৩৩ কেভি সাইটে ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার থাকায় পূর্ব প্রান্তের ৩৩ কেভি সংযোগ লাইনের ইনকামিং ব্রেকার হিসেবে ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার স্থাপন করা হবে।

এদিকে কর্ণফুলি টানেলের ঠিকাদার সিসিসিসি এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, টিবিএম মেশিনের কার্যক্রম ২০১৮ সালে শুরু হবে। তখন বিদ্যুৎ এর চাহিদার পরিমাণ হবে নদীর উভয়পাড়ের জন্য ন্যূনতম ১৫ মেগাওয়াট। ২০১৭ সালে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এবং অস্থায়ী স্থাপনাসমূহের জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা নদীর প্রতি প্রান্তে পিক আওয়ারে ০২ মেগাওয়াট।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, টানেলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অন্যান্য গ্রাহকের মতো বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বিল দেবে। টানেল নির্মাণকালে বিদ্যুৎ বিল দেবে ঠিকাদার এরপর বিল দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ। তাই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, গ্রিড স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পাদন করতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগকেই। আর এজন্যই প্রকল্পের ডিপিপিতে (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপজাল) কেবল বিদ্যুৎ সংযোগ ফি ১০০.০০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থানে পৌঁছানোর বিষয়টি উল্লেখ আছে। এ বাস্তবতায় বিদ্যুৎ বোর্ড থেকে ৭৮ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৩ টাকা অগ্রিম জমা দেওয়ার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে যা ডিপিপিতে সংস্থান নেই। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভার মাধ্যমে কর্ণফুলি টানেল নির্মাণ প্রকল্প সাইটে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সেতু বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠানো হতে পারে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অ্যাপ্রোচ রোডসহ ৪.৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলটি নির্মাণ করা হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এর জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হওয়ার দাবি করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৭০৫ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৬৭৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চিনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ ব্যয় হবে জিওবি (রাষ্ট্রায়ত্ত) খাত থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে জিটুজি ভিত্তিতে। এর আগে ২০১৩ সালে টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিসিসিসি ও হংকংয়ের ওভিই অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস। পরে টানেল নির্মাণে প্রস্তাব দেয় সিসিসিসি এবং একই বছরের ২২ ডিসেম্বর এমওইউ হয়। পরবর্তীকালে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিসিসিসিকে মনোনয়ন দেয় চীন সরকার।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist