নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আদা, রসুন, পেঁয়াজ মসলাসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে

নিত্যপণ্যের বাজারে করোনার প্রভাব!

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে

চীনে দেখা দেওয়া করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা সব কটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, চাল, ডাল, চিনি, তেল, মসলাসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বাজারদর পর্যবেক্ষণ এবং সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেই গত এক সপ্তাহে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১১টি পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে আদা, রসুন ও মসলার দাম বেড়েছে বেশি।

ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে আমদানিনির্ভর রসুন ও আদা আসা কমেছে। তাছাড়া দেশি রসুনের মৌসুম শেষ হয়েছে। নতুন আগাম দেশি রসুন এবং আমদানি করা রসুনের সরবরাহও কম। এসব কারণে এ পণ্য দুটির দাম বাড়ছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের অজুহাতে চীন থেকে আমদানি করা হয় এমন সব পণ্যের দামই বেড়েছে। আবার এই সুযোগে বাড়ানো হয়েছে চীন থেকে আমদানি হয় না এমন পণ্যের দামও। খুচরা বাজারে গতকাল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে আদা বিক্রি করতে দেখা যায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। একই অবস্থা রসুনের ক্ষেত্রেও। আমদানি করা চীনা রসুন এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। একই রসুন গতকাল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। আগের সপ্তাহে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি কাঁচা পেঁয়াজ গতকাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। দারুচিনি বিক্রি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৪০০ টাকা কেজিতে। যদিও বেশির ভাগ বিক্রেতা দোকানে প্রদর্শিত বোর্ডে পণ্যের দাম বাড়াননি। এছাড়া গতকাল এক দিনেই দাম বেড়েছে শুকনা মরিচ, ডাল ও চিনির। পাম তেলের দাম কমলেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২ টাকা বেড়েছে। এখন ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৫৮০ থেকে ৫২০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন লিটারে সর্বোচ্চ ৩ টাকা কমে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম তেল লিটারে সর্বোচ্চ ৩ টাকা কমে ৮০-৮২ টাকা ও সুপার পাম লিটারে সর্বোচ্চ ৪ টাকা কমে ৮৪-৮৬ টাকা হয়েছে। বড় দানার মসুর ডাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা ছিল। দাম বেড়ে তা হয়েছে ৭০-৮০ টাকা।

টিসিবির তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ৭০ থেকে ১০০ টাকা দামের আমদানি করা পেঁয়াজ গতকাল বিক্রি হয় ৭০ থেকে ১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে ৮২ থেকে ৮৪ টাকা লিটার দরে বিক্রি হওয়া পামঅয়েল গতকাল বিক্রি হয় ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরের চিনি গতকাল বিক্রি হয় ৬২ থেকে ৬৫ টাকা। ১০০ থেকে ১১০ টাকা লিটার দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানায় টিসিবি। সংস্থাটির মতে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি সাধারণ সরু চালের দাম ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পাইজাম চালের দাম দাম ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম ১১ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এক মাসে ১৮ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ৪৭ শতাংশ বেড়েছে শুকনো মরিচের দাম। তুরস্কের ডাল এক বছরের ব্যবধানে ৩৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এক বছর আগে এ দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হয় ৩৫-৩৬ টাকা। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩০-৩২ টাকা। নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৫০-৫২ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি। যা তিন সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪৬-৪৮ টাকা। এ বিষয়ে কারওয়ানবাজারের সোহেল রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, মিলাররা এখনো চালের সংকট দেখিয়ে বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল।

অন্যদিকে ভরা মৌসুমেও সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। টমেটো বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হয়েছে গাজর ও শসা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর মুলা বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিত্যপণ্য,বাজার,করোনা,পণ্য,টিসিবি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close