নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ জানুয়ারি, ২০২০

ভোজ্য তেলেও পেঁয়াজের ঝাঁজ

পেঁয়াজের সঙ্গে লাগামহীন হয়ে পড়েছে ভোজ্য তেলের বাজার

পেঁয়াজের ভর মৌসুমেও লাগামহীন বাজার। দেশি-বিদেশি পেঁয়াজে ভরপুর পাইকারি বাজারের গুদাম। খুচরা বাজারেও সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে। এমনকি প্রতিদিনই এই নিত্যপণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে। এমন অবস্থার মধ্যেও বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে বাজারে নিত্যদিনের এই পণ্যটির দাম বাড়ছে হু হু করে। গত চার দিনের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকার বেশি। গত বুধবার প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। গতকাল রোববার পণ্যটি ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ হাঁকিয়েছে। কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ২১০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এদিকে, পেঁয়াজের সঙ্গে লাগামহীন হয়ে পড়েছে ভোজ্য তেলের বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে কোনো সংকট না থাকা সত্ত্বেও গত এক মাসে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি তেলের দাম বেড়েছে অন্তত ৩০০ টাকা। আর প্রতি লিটারে গত এক সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে সয়াবিন তেল। গত ডিসেম্বর থেকে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার যে যাত্রা শুরু হয় তা নতুন বছরের শুরুতেও অব্যাহত রয়েছে। দাম বাড়ার গতিও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি।

সবশেষ পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩৮০ টাকায়। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৩ হাজার টাকারও কম। সয়াবিনের মতো পাম অয়েল ও সুপার সয়াবিন এক মাসে দামও ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে আর এন এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, বুকিং রেট বেড়েছে। অনেক প্রোডাক্ট এলসি হয়নি। তাই দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পাইকারির মতো খুচরা কিংবা বোতলজাত তেলের দামও বর্তমানে লাগামহীন। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক মাসে বোতলজাত তেলের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভোজ্যতেলের রফতানিকারক দেশ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় দাম নিয়ে অস্থিরতা চলছে। তার রেশ এসে পড়ছে বাংলাদেশের বাজারে। বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে।

তবে পেঁয়াজকান্ডের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে রোজার আগে ভোজ্যতেল ও চিনির বিষয়ে সতর্ক থাকতে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ভুট্টো বলেন, গত দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল। বাজার অনেক বেড়ে গেছে। আবার কখন এই বর্ধিত বাজার কমে যায়, সে কারণে অনেক সতর্ক আমদানিকারক আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। চিনির দাম বাড়ার ক্ষেত্রেও একই কারণ দেখান আমদানিকারক সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধিসহ দেশীয় কিছু কারণে তেল-চিনির দাম বাড়ছে। তেল লিটারে ৫ টাকা করে বাড়াতে হয়েছে। রোজা সামনে রেখে এই মুহূর্তে আমদানির এলসি খুলতে হলে সেই তেলের দাম আরো বাড়াতে হবে। কারণ কেউ তো লস দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের বাণিজ্য পরামর্শক গোলাম খোরশেদ বলেন, যেহেতু সয়াবিন তেল আমদানিনির্ভর, তাই বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে পারে। তবে বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে কোম্পানিগুলো অযৌক্তিক দাম বাড়াচ্ছে কি না তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম তেল আমদানি করা হয়। আর সয়াবিন তেল আমদানি করা হয় ব্রাজিল ও সিঙ্গাপুর থেকে।

বাজারে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা এড়াতে সঠিক চিত্রের ধারণা নিয়ে আগাম সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, সয়াবিন, পাম তেল ও চিনির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হলেও একটি বিষয় দেখা যায় তা হচ্ছে বাংলাদেশে বিশ্ব বাজারের তুলনায় দাম অনেক বেশি থাকে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর দাম সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পরে আমদানি বাড়ায় ও দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে আসে। গত সোমবার থেকে লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পেঁয়াজসহ শীতের সবজির ক্ষতি হবে এমন আশঙ্কায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার দাম বাড়াতে শুরু করেছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজার,পেঁয়াজ,ভোজ্য তেল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close