অবরুদ্ধ বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিকে মুক্ত করেছে পুলিশ
বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশের হাতে অবরুদ্ধ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আলমসহ পর্ষদ সদস্যদের ৭ ঘণ্টা পর মুক্ত করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের বের করে নিয়ে আসে। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা 'সেম, সেম' বলে ওঠেন। রাত ১১টার পর ধীরে-ধীরে সবাই ব্যাংক কার্যালয় ত্যাগ করেন।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক শেষে পর্ষদ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বেসিক ব্যাংক নিজস্ব বেতন কাঠামোতে পরিচালিত হয়ে আসছে। ব্যাংকটির বেতন কাঠামো রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় বেশি ছিল। বড় ধরনের জালিয়াতি ও ঋণ অনিয়মের কারণে সাত বছর ধরে ব্যাংকটি লোকসান দিয়ে আসছে।
এ অবস্থায় গত ২২ ডিসেম্বর অন্য সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন কাঠামো কার্যকর করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসিক ব্যাংক। ২৩ ডিসেম্বর বিষয়টি জানার পর এমডির কক্ষের সামনে জড়ো হন প্রধান কার্যালয়ের কর্মীরা। তখন এমডি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেন, বিষয়টি পরবর্তী পর্ষদ সভায় আলোচনার জন্য তুলবেন।
রোববার পর্ষদ বৈঠকে পূর্বের কাঠামো পুনর্বহালের দাবি নাকচ করা হয়। এই তথ্য জানার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবার বিক্ষোভ করেন এবং বোর্ডরুমের সামনে অবস্থান নেন। পর্ষদ বৈঠক শেষে একজন সদস্য বের হয়ে নিচে নামার জন্য লিফটের সামনে এলে বিক্ষোভকারীরা তাকে জোরপূর্বক বোর্ডরুমে ফেরত আসতে বাধ্য করেন। পাশাপাশি অন্য সদস্যদের বোর্ডরুম থেকে বের হতে নিষেধ করেন। এ সময় তারা নানা স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ গণমাধ্যমকে বলেন, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো পুনর্বহালের দাবি নাকচ হয়েছে। তবে অন্য সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা যাদের আছে, বেসিক ব্যাংকের জন্য তাদের মতো বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরও বিক্ষোভ থামানো হয়নি। এটি অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের অবস্থা অনেক খারাপ থাকলেও কর্মী ছাঁটাই হয়নি। শুধু অন্য সরকারি ব্যাংকের মতো বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বেতন কাঠামো দেখে আমরা নিজ যোগ্যতায় চাকরি নিয়েছি। এখন বেতন কমানো অযৌক্তিক। বোর্ডের অদক্ষতা, অযোগ্যতা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে ব্যাংক লোকসানে পড়েছে। পর্ষদের ব্যর্থতার দায়ভার আমরা নেব কেন? এটা আমরা মানি না। তাই অনতিবিলম্বে বেতন কমানোর সার্কুলার বাতিলের দাবি জানান কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, সারাদেশেবেসিক ব্যাংকের ৭২টি শাখায় বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ১০০ কর্মী রয়েছেন। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর সময়ে ব্যাপক ঋণ জালিয়াতি, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এক সময়ের অত্যন্ত ভালো এই ব্যাংকটি বর্তমানে লোকসান গুনছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ আট হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।
পিডিএসও/তাজ