গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

চট্টগ্রাম বন্দর : সিঙ্গাপুরের আদলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে

জাহাজের ক্ষতিকর বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুর বন্দরকে অনুসরণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। চট্টগ্রাম বন্দর ও আশপাশের এলাকাকে দূষণমুক্ত রাখতে বিদেশি ওই বন্দরের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাকে গ্রহণ করতে চাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে, বন্দরকে দুষণমুক্ত রাখতে চার্জ নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই চার্জ পরিশোধ করবেন দূষণ ছড়ানো জাহাজের মালিকরা। যদি কোনো মালিক চার্জ পরিশোধ না করেন তাহলে ওই জাহাজকে বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য ছাড়পত্র দেবে না কর্তৃপক্ষ।

এর আগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. আলাউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে বিদেশি নামিদামি বন্দরগুলোর সমমানে চট্টগ্রাম বন্দরকে দূষণমুক্ত রাখতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএসহ ১৯ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। কমিটি চারটি সভা এবং সরেজমিন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। বিদ্যমান ৫০০ নিয়োগপ্রাপ্ত ভেন্ডারের বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রগুলো পরিদর্শন করেন যার মধ্যে জাহাজের বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি, সংগ্রহকারীদের কার্যপদ্ধতি ও ডাম্পিং স্থান ছিল। তাদের পর্যবেক্ষণে নেতিবাচক কোনো দিক উঠে আসেনি।

কমিটি বলেছে, দৈনিক শত শত জলযান হতে কঠিন, তরল বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন, সংগ্রহ, সঠিক স্থানে ব্যবস্থাপনা করা এই বন্দরের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কাজটিকে সুন্দর ও সুচারুভাবে করার জন্য একাধিক ভেন্ডার নিয়োগ করা দরকার। তবে এত বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ ও জাহাজজাত ময়লা, আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট বর্জ্য আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং নিষ্পত্তির জন্য স্থায়ী কোনো পদ্ধতি (সিস্টেম) গড়ে না উঠায় কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে কমিটির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ।

তারা বলেছে, বন্দরকে দূষণমুক্ত রাখতে হলে নিকটবর্তী দেশ সিঙ্গাপুর বন্দরের মডেল এখানে গ্রহণ করাই শ্রেয়। তাই কমিটির অন্য সুপারিশের পাশাপাশি এ সুপারিশকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলে জানা গেছে।

এদিকে, কমিটি সব মিলিয়ে ৩০টি সুপারিশ রেখেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এসব সুপারিশের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মরত বৈধ ভেন্ডারদের তালিকা প্রস্তুত করা এবং তাদের মানসম্মত জাহাজের বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা কর্মে নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা, জাহাজ, জলযান হতে কোনো ধরনের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য বা তৈল বর্জ্য উপকূলীয় জলাভূমিতে সাগরে, নদীতে বা জলাশয়ে নিঃসরণ না করা, বন্দরের আইন ও বিধি অনুসারে জলযানের ময়লা, আর্বজনা ও বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তির (ডিসপোজাল) জন্য নিদের্শনা জারি করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অপসারণ সেলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও সহায়ক সার্পোট এবং চবকের বর্জ্যরে দ্রব্যাদির তালিকা প্রকাশ, প্রত্যেক জাহাজ, জলযানের মালিককে নৌযানের আকার, আয়তন, বর্জ্যরে পরিমাণ, বিবেচনা করে জাহাজ খালাসের সময় বন্দরের কাছে ‘বর্জ্য চার্জ’ পরিশোধ এবং চার্জ পরিশোধসাপেক্ষে ওই জাহাজ বা জাহাজের মালিককে ছাড়পত্র দেওয়া, বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য একটি উপযুক্ত বর্জ্য স্থান (ডাম্পিং ফিল্ড) নির্বাচন করা এবং বন্দরের সীমানার মধ্যে যেসব স্থানে জাহাজ ভিড়ে ও খালাস করা হয়, ওই সব স্থানে পানি দূষণ রোধে বিদ্যমান বিধি ও বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রয়েছে কমিটির।

মন্ত্রণালয় ও বন্দরের একটি সূত্রের তথ্য মতে, চবককে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে ৫০০টি ভেন্ডার নিয়মিত কাজ করে থাকে। এসব ভেন্ডারগুলো বন্দরের ময়লা, আবর্জনা ও জাহাজের বর্জ্য সংগ্রহ করছে। অধিক সংখ্যক ভেন্ডার থাকার কারণে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে যা আধুনিক এই বন্দরের জন্য বিব্রত কর বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, বর্জ্য অপসারণ কাজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর (কন্ট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন, জাহাজ মালিক সমিতি, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, চবক, নৌপরিবহন অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতর) মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই এককভাবে বর্জ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার কাজ স্বংসম্পূর্ণভাবে সম্পাদন করছে না এমন অভিযোগ রয়েছে। তাই আধুনিক ও আন্তজার্তিক মানের আদলে এই বন্দরকে গড়ে তুলতে পরিবেশ দূষণ অপরিহার্য। তাই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনিদের্শনা চাচ্ছে এ সংশ্লিষ্টরা; যাতে এখানে কর্মরত সব পক্ষকে এক ছাতার নিচে এনে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্দরের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে চবক এলাকার দূষণ চিরতরে বন্ধ হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় নদীয় রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বর্জ্য অপসারণ ও সমন্বিত ব্যবস্থা শুধু চট্টগ্রাম পোর্টের জন্য নয়, সব পোর্টের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। বর্জ্যরে দূষণ যারা সৃষ্টি করছে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিঙ্গাপুর,বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,চট্টগ্রাম বন্দর,দূষণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close