শাহজাহান সাজু

  ০৯ জুলাই, ২০১৯

রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেওয়া হবে

হুন্ডিকে নিরুৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ

সদ্য শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে বৈধপথে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৫ শতাংশ বাড়ানো এবং হুন্ডিকে নিরুৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এজন্য রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা দেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারই প্রথম রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই এর আগে এর কোনো নীতিমালা বা ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়নি। তবে এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রণোদনা দেওয়ার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই প্রণোদনা দেওয়ার ওপর সম্ভাব্য পাঁচটি ঝুঁকিও নিরূপণ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে বারবার প্রণোদনা নিতে একই রেমিট্যান্স পুনরায় বিদেশে পাঠানো, বিধিবহির্ভূত প্রণোদনা গ্রহণের পর তা ফেরত না দেওয়া, প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব, রফতানিকারকরা কৌশলে এই সুবিধা ভোগ করতে পারেন এমন শঙ্কা এবং ভবিষ্যতে এই সুবিধা প্রত্যাহারের সমস্যাও এর অন্তর্ভুক্ত। প্রতি ১০০ টাকার রেমিট্যান্সের বিপরীতে দেওয়া হবে ২ টাকা প্রণোদনা। এজন্য চলতি বাজেটে এ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।

সূত্র আরো জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো রেমিট্যান্সের বিপরীতে যে প্রণোদনা দেওয়া হবে, সেখানে যে ঝুঁকিগুলো নির্ধারণ করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রবাসীরা নিজ নামে তার আত্মীয়স্বজনদের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকে। সেখানে প্রচলিত ব্যবসায়িক লেনদেনের মতো আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তির প্রয়োজন হয় না। এজন্য রফতানি বাণিজ্যের মতো লেনদেন সম্পাদনের সপক্ষেও কোনো কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। ফলে রেমিট্যান্স খাতে আর্থিক প্রণোদনা সুবিধা নেওয়ার পর একই অর্থ (রেমিট্যান্স) অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে পুনরায় বিদেশে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রণোদনা লাভের সুবিধা গ্রহণের জন্য পুনরায় ওই অর্থ রেমিট্যান্স আকারে দেশে আসতে পারে। তাছাড়া প্রবাসী আয়ের বিপরীতে নগদ পরিশোধিত প্রণোদনার অর্থ কেউ বিধিবহির্ভূতভাবে নিলে তা সহজে আদায় করা যাবে না।

স্বল্পমেয়াদে এই প্রণোদনা ফলপ্রসূ হলেও দীর্ঘমেয়াদে শ্রমবাজারে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রফতানিকারদের অনুকূলে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। এতে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক বাজারে কম মূল্যে পণ্য রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করেন ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে ন্যায্যমূল্যে পণ্য রফতানি না করেও উদ্যোক্তারা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।

অন্যদিকে প্রবাসী আয়ের ওপর প্রণোদনা সুবিধা দেওয়ার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক শ্রম বাজারে প্রবাসীদের সস্তায় শ্রম বিক্রিতে উৎসাহ দেওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া রফতানিতে সব খাতে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর ব্যবসায়ীরা তাদের রফতানি মূল্যের অংশবিশেষ প্রবাসী আয় হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। এতে সফল হলে তিনি উৎসে কর থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তিসহ প্রণোদনা গ্রহণের সুযোগ পাবেন। আর প্রণোদনা সুবিধা একবার দেওয়া হলে ভবিষৎতে তা প্রত্যাহার বা কমানোর সুযোগ নাও থাকতে পারে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এ ধরনের সুবিধা প্রদানে ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে প্রত্যাহার বা কমানোর নেতিবাচক প্রভাব সাধারণত অনেক বেশি হয়ে থাকে বলে প্রণোদনা দেওয়ার ওপর সম্ভাব্য ঝুঁকিতে বলা হয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রণোদনা,রেমিট্যান্স,প্রবাসী আয়,অর্থ মন্ত্রণালয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close