হাসান ইমন

  ২৭ জুন, ২০১৯

হাট ইজারায় অস্বাভাবিক দরপতন

রামপুরা-ডেমরা সড়কের পাশে আমুলিয়া মডেল টাউন। গত বছর এখানে প্রথম হাট বসে। তখন তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও ইজারা দিতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এবার হাটটিতে দরপত্র আহ্বান করলেও সরকারি দরের কাছাকাছি আসতে পারেননি দরদাতারা। ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৪ লাখ টাকা। দরদাতার নাম আহসান উল্লাহ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন হেলালুদ্দিন বেপারি। তিনি দিয়েছেন ৩ লাখ টাকা।

তবে শুধু এই হাটটি নয়, একই অবস্থা দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগাপুর নগর (আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া ও লোহারপুলের পূর্ব অংশ এবং খোলা মাঠসংলগ্ন) এলাকার হাটটিতেও। সেখানে একটি দরপত্র পড়েছে। আর পূর্ব বাসাবোর মোকাস্সেদ হাটটির জন্য দর দিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। যার সরকারি দর ছিল ৬৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া শ্যামপুর বালুর মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গার হাটটির একই অবস্থা। এ হাটটির সরকারি দর ছিল ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৮ টাকা। যার বিপরীতে সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান ৪৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন একই এলাকার তাজুল ইসলাম ৩৫ লাখ টাকা। তৃতীয় ও চতুর্থ দর ৩০ এবং ২৫ লাখ টাকা।

এই তিনটি হাট সরকারি দরের চেয়ে অনেক কমমূল্যে দরপত্র পড়েছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে জানা যায়, কম মূল্যে এসব হাট ইজারা নিতে প্রথম থেকেই কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। তাদের সিন্ডিকেটের কব্জায় পশুর হাট। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সিটি করপোরেশনর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে বেশ সখ্য রয়েছে। ইজারা না হলে খাস প্রক্রিয়াতেই হাট নিতে পারলে খুশি তারা। এ প্রক্রিয়াতে বেশি টাকা লাভ করা যায়। এ জন্যই তারা নাম মাত্র দরপত্র দিয়েছে বলে মনে করেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এবার ১৪টি পশুর হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে ডিএসসিসি। বাকি ১১টি হাট সরকারি দর পেলেও ৯টি হাটই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ইজারা হয়েছে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ার টেক মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গাটির জন্য সরকারি দর ছিল ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ হাটটিতে তিনটি দরপত্র পড়েছে। সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ফরহাদ উদ্দিন বাবু ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন জুয়েল ৩০ লাখ টাকা। ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গাটির জন্য সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যার সরকারি মূল্য ছিল ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ হাটটিতেও ৩টি দরপত্র পড়েছে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন জহিরুল ইসলাম অ্যাপোলো ৩২ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

একই অবস্থা শনিরআখড়া ও দনিয়া মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গার পশুর হাটটির। এ হাটটির জন্য এবার ৩টি দরপত্র পড়েছে। এ হাটটিতে সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন মোশাররফ হোসেন ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। যার সরকারি মূল্য ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন কাজী মোহাম্মদ বদরুল হুদা ৪০ লাখ টাকা। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন সিটি করপোরেশনের খালি জায়গা হাটটির সরকারি দর ছিল ১ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। যার বিপরীতে সর্বোচ্চ দর পড়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ টাকা। সর্বোচ্চ দর দিয়ে এ হাটটি ইজারা পেয়েছেন মুরাদ হোসেন। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ইমরান হোসেন ১ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া পোস্তগোলা শশ্মানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা হাটটিতে ৩টি দরপত্র পড়েছে। সরকারি দর ছিল ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৭ টাকা। ৮৯ হাজার ৬৩৩ টাকা বেশি দিয়ে এ হাটটি ইজারা পেয়েছেন মঈন উদ্দিন চিশতী। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন আসাদুজ্জামান ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গাটির জন্য ৩টি দরপত্র পড়লেও ১টিতে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার সর্বোচ্চ দর দিয়ে ইজারা পেয়েছেন আবুল হোসেন সরদার। তিনি গতবারও নিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন হাজি মো. সোলাইমান ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যার সরকারি দর ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।

রহমতগঞ্জ খেলার মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গাটি সর্বোচ্চ দর দিয়ে ইজারা পেয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফেন্ডস সোসাইটির পক্ষে সফি মাহমুদ। তিনি দর দিয়েছেন ১২ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা। যার সরকারি দর ছিল ১০ লাখ ৭০ হাজার ১২৩ টাকা। জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা হাটটিতে এবার সর্বোচ্চ দর দিয়ে ইজারা পেয়েছেন দিন মোহাম্মদ ভূঁইয়া ৯৮ লাখ টাকা। উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গাটি সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এসএম এন্টারপ্রাইজের পক্ষে আবদুল লতিফ নিয়েছেন হাটটি। মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের এলাকার খালি জায়গাটির সরকারি মূল্য ছিল ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৮ টাকা। যার বিপরীতে দর পড়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকা। লিটিল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গাটিতে সর্বোচ্চ দর পড়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৮১ হাজার ১৮১ টাকা। সরকারি দর ছিল ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, আমরা এখনো পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করিনি। এখানে যারা সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন, তাদের পে-অর্ডারসহ কাগজপত্রে সমস্যা থাকতে পারে। যাচাই-বাছাই করে কারো সমস্যা থাকলে তাকে বাদ দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যদি সরকারি দরের ওপর থাকে। সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এলাকায় সিন্ডিকেট থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। নিয়ম অনুযায়ী যে হাট সরকারি দর পায়নি, সে হাটগুলোর জন্য আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দরপতন,হাট ইজারা,ডিএসসিসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close