শাহজাহান সাজু

  ১১ এপ্রিল, ২০১৯

অনলাইন ভ্যাটে কমবে দৌরাত্ম্য বাড়বে রাজস্ব

ফাইল ছবি

অনলাইভিত্তিক মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ব্যবস্থা অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য কমাবে এবং একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের মূসক ফাঁকির প্রবণতা কমাবে। এতে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আসবে, রাজস্ব আদায় বাড়বে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় এমন কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় আয়ের অন্যতম ভিত্তি মূসক। বর্তমানে রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩৮ শতাংশ আসে ভ্যাট থেকে। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে ২০২১ সালের মধ্যে রাজস্ব আয় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা হতে হবে। কিন্তু ২০১২ সালের এ আইনটি নানা কারণে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের কথা থাকলেও দুই বছর পিছিয়ে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চালুর কথা রয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, নিত্যপণ্য এবং সেবার ক্ষেত্রে সংকুচিত মূল্য ও বিধানের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন মূসক হার নির্ধারণ, ভৌগোলিক সীমার ভিত্তিতে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর অনুরূপ কেন্দ্রীয় ও ইউনিটভিত্তিক নিবন্ধন করা যেতে পারে। করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, নতুন আইনে যেহেতু কর রেয়াতের সুযোগ অবারিত করা হয়েছে। ফলে অনলাইনভিত্তিক চালানপত্র দাখিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে রেয়াত প্রদান অবারিত করা যাবে না।

নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, মূসক আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কার ও প্রণোদনা নতুন আইনে কার্যকর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নতুন আইনের ভ্যাট হার নিয়ে এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইনের আংশিক কার্যকর করা হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো আইনটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে নতুন আইনে ভ্যাটের হার তিন স্তরের হবে- ৫, ৭ এবং ১০ শতাংশ। তাছাড়া বর্তমানে যেসব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে সেটি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

তিনি আরো বলেছেন, নতুন আইনে নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। এমন বিধান রাখা হচ্ছে। ভ্যাট আদায়ে ফাঁকিরোধে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

জানা যায়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে নতুন মূসক বা ভ্যাট আইন আগামী বাজটে থেকেই কার্যকরের তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা বলেছে বহুজাতিক ঋণদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল এবং এনবিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে আইএফের পক্ষ থেকে ভ্যাটসহ সরকারের অন্যান্য রাজস্ব বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, সরকারি আয়ের বড় অংশই আদায় হয় ভ্যাট। পণ্য ও সেবা খাত থেকে এই ভ্যাট আদায় হয়। পণ্য খাতে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয়ে থাকে সিগারেট ও বিড়িশিল্প থেকে। অপরদিকে সেবা খাতে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হচ্ছে ব্যাংকিং খাত, নির্মাণ সংস্থা ও সরকারি কাজে বিভিন্ন ক্রয় ও সরবরাহ থেকে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নকে সামনে রেখে পুরো ভ্যাট বিভাগকে অটোমেশন করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নেয় এনবিআর। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেতা পণ্য কিনলে মূল্য ইলেকট্র্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের মাধ্যমে পরিশোধ করবে। যা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের দৈনিক ও মাসিক হিসাব পাওয়া যাবে। এমনকি এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীর সব বেচা-কেনার তথ্যও সংরক্ষিত থাকবে। তাই ভ্যাট ফাঁকির কোনো সুযোগ থাকবে না। এছাড়া এই ভ্যাট আদায়ে ফাঁকিরোধে ইলেকট্র্রনিক ফিসকাল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য এনবিআরে যে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে তাতে করে একটি বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজস্ব,দৌরাত্ম্য,মূসক ফাঁকি,এনবিআর,ভ্যাট
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close