তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৩ এপ্রিল, ২০১৯

জাহাজভাঙাশিল্প

প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য অভিশাপ

*১৫০টির মধ্যে অনুমতি আছে ৮১টির *সাগরে ফেলা হচ্ছে জাহাজের বর্জ্য *অভিযুক্তদের পরিবেশ অধিদফতরে হাজির হতে নির্দেশ

দেশে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের প্রায় ৮৫ শতাংশ জোগান দেয় জাহাজভাঙা শিল্প। শুরু থেকেই সম্ভাবনাময় খাত হলেও পরিবেশ প্রশ্নে উদাসীনতার কারণে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিল্পটি। নির্দেশনা মানছে না অনেক শিপইয়ার্ড মালিক। অধিকাংশ শিপইয়ার্ড সাগরে ফেলছে জাহাজের বর্জ্য। ফলে একদিকে যেমন ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের তেমনি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে প্রাণবৈচিত্র্য।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (চট্টগ্রাম অঞ্চল) মুক্তাদির হাসান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা সর্বশেষ ২০ মার্চ অভিযানে গিয়েছিলাম। যাদের দোষ-ক্রটি পাওয়া গেছে, তাদের বুধবার (আজ) হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ৮১টির অনুমতি রয়েছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। অন্য একটি প্রশ্নে মুক্তাদির বলেন, এখানে অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। যারা শিপ থেকে বর্জ্য ফেলবে তাদের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

এর আগে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে এইচএম শিপইয়ার্ডকে ৮০ হাজার টাকা, জাহানাবাদ শিপব্রেকিং ইয়ার্ডকে ৬০ হাজার, এসএনটি শিপ রিসাইক্লিংকে ৬০ হাজার, কদমরসুল স্টিল শিপব্রেকিং ইয়ার্ডকে ৫০ হাজার, খাজা শিপব্রেকিংকে ৫ লাখ, ফোর স্টার করপোরেশনকে ৫০ হাজার, এসএল শিপ রিসাইক্লিংকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। এদিকে আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতে অনুমতিবিহীনভাবে আটকে পড়া জাহাজ কাটার জন্য ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদফতর।

অনুসন্ধান বলছে, শিপইয়ার্ডগুলোর অবস্থান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডু, মাদাম বিবির হাট, কুমিরা, ভাটিয়ারী, সোনাইছড়ি, জাহানাবাদ, কদমরসুল, বাঁশবাড়িয়া ও মিরসরাই। এসব এলাকায় কমপক্ষে শিপইয়ার্ড রয়েছে ১৫০টির মতো। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি আছে মাত্র ৮১টির। বাকিগুলোর মধ্যে অনেকে আবেদন করলে নানা জটিলতার কারণে তাদের অনুমতি মেলেনি।

সীতাকুণ্ডু ও মিরসরাইয়ের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে জাহাজভাঙা শিল্প। শিপইয়ার্ডে যেসব জাহাজ কাটা হয় তার অধিকাংশই অয়েল ট্যাঙ্কার। দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা জাহাজগুলোয় থাকে কালো তেল ও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। যা ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত। জাহাজ কাটতে গিয়ে এসব দ্রব্য সরাসরি সাগরে ফেলা হচ্ছে। অথচ এসব কাজে রাসায়নিক পদার্থ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার কথা থাকলে তা অনেকে মানছে না। বেশ কয়েকটি জাহাজে এসব রাখা হলেও তা শুধুই লোক দেখানো। অভিযোগ আছে, খরচ কমানোর জন্য মেশিনারিজ থাকলেও সেগুলো ব্যবহার করছে না শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি করা পুরোনো জাহাজ কাটার সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে নানা পরিকল্পনা নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানছে না শিপইয়ার্ডগুলো। ফলে সাগরে মিশছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।

স্থানীয়রা বলেন, সাগরকূলে গড়ে উঠা ঘাসের সঙ্গে কালো তেল লেপে যায়। এমনটি গরু-ছাগলও সেগুলো খেতে চায় না। এক প্রকার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। তাছাড়া ছোট ছোট নৌকার নিচের অংশে লেগে যায়।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিবেশ। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও কেউ তা মানছে না।

মুক্তাদির হাসান বলেন, জাহাজগুলো থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি সমুদ্রে ফেলানো হচ্ছে। আমরা অভিযানে গিয়ে তার প্রমাণও পেয়েছি। তাদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে এবং জরিমানাও করা হয়। এরপরও তারা ফের এ কাজটি করছে। তিনি বলেন, আমাদের ওপর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। আমরা এখন সেদিকে এগোচ্ছি।

শিপইয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডার্ড মেনে শিপইয়ার্ড চালাতে হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়। সংখ্যায় হলে ২৭০ কোটির মতো। এ ব্যয়বহুল খরচ আমাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। তাছাড়া আগের মতো ব্যবসা এখন আর নেই। আমরা জাহাজ কাটার সময় বর্জ্য যাতে সমুদ্রে না পড়ে সেদিকে নজর রাখি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রাণবৈচিত্র্য,জাহাজভাঙা,চট্টগ্রাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close