শাহজাহান সাজু

  ০৪ মার্চ, ২০১৯

রমজানের আগে ৬ পণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ

পবিত্র রমজান মাস এলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজির আশঙ্কা তৈরি হয়। এজন্য সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ছয় নিত্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাজারের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর। তাই ওই ছয়টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও এ ধরনের পণ্যসামগ্রীর আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবার নিয়মিত বাজার তদারকি করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তা ছাড়া রমজান মাস সামনে রেখে মার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছে সরকার। ওই বৈঠকে রমজানের প্রস্তুতি, পণ্যের চাহিদা ও জোগান, টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো এবং ব্যবসায়ীদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এবার রোজা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই হিসেবে আর দুই মাস পরই আসছে পবিত্র রমজান। আমদানি করা ভোগ্যপণ্য সঠিক সময়ে দেশে নিয়ে আসতে হলে এখনই ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রমজানে ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ লাখ টন, চিনি ৩ লাখ, ছোলা ৮০-৯০ হাজার, খেজুর ১৮ হাজার এবং পেঁয়াজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টন। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন মসুর ডালের চাহিদা তৈরি হয়। তবে গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে এসব পণ্যের দাম বাড়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাম কমে বাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে রোজায় যাতে বাজারে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকে সে জন্য আমদানি বাড়ানোর কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোগপণ্যের দাম নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। তাই আসন্ন পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে বাজার মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। এখন পর্যন্ত রোজায় ব্যবহার হয় এমন পণ্যের কোনো সংকট দেশে নেই। তা ছাড়া ওই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে আমদানি বাড়ানোসহ যা করুণীয় সরকারের পক্ষ থেকে তার সবই করা হবে। পাশাপাশি এবার সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাজারের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখবেন সংশ্লিষ্টরা। যেকোনো ধরনের পণ্যে মূল্যের কারসাজি অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। রমজানে চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের আমদানি ও মজুদের মধ্যে সমন্বয় রাখতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোগপণ্যের দাম নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ৮০ থেকে ৮৪ এবং ৫ লিটারের বোতল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা পামওয়েল ৬০ থেকে ৬৬ এবং পামওয়েল সুপার ৬৬ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনি ৫০ থেকে ৫৫, পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫, ছোলা ৭৫ থেকে ৮৫, মসুর ডাল ৫৫ থেকে ১১০ এবং খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ৩০০ কেজিতে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য-সংক্রান্ত সেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রত্যেক মাসে বৈঠক হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। এর আগের বৈঠকে ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তবে মার্চের প্রথম সপ্তাহে শুধু রমজানের বাজার পরিস্থিতি কেমন হবে এবং ওই সময় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে করুণীয় নির্ধারণ করা হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে রমজানে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়। এবার মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম আরো বেগবান করার উদ্যোগ রয়েছে সরকারের তরফ থেকে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রমজান,পণ্য আমদানি,বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close