শাহজাহান সাজু

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

১৮ লাখ করদাতাকে খুঁজছে এনবিআর

ইলেকট্রনিক করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) থাকার পরও আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমায় অনীহা দেখাচ্ছেন অনেকে। বিগত করবর্ষের রিটার্ন জমার সর্বশেষ সময় ছিল ২ ডিসেম্বর। ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ২০ হাজার হলেও ওই সময়ের মধ্যে জমা দিয়েছেন ১৬ লাখ ৯২ হাজার করদাতা। আর আবেদনের মাধ্যমে সময় নিয়েছেন আরো প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার করদাতা। সময় শেষ হওয়ার পরও জমা দেননি ১৮ লাখ ১৩ হাজার করদাতা।

তবে বসে নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর)। এই করদাতাদের খুঁজতে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে আয়কর বিভাগ। তাছাড়া আগের বছরের চেয়ে রিটার্ন জমা কম হওয়ায় এর কারণ খুঁজতেও মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে রাজস্ব বিভাগ।

সূত্র জানায়, আগের বছর করদাতার সংখ্যা ২৯ লাখ থাকলেও রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৪। আর সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন ছিল আরো ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫৬ জনের। সব মিলিয়ে গত কর বছরে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। সে হিসাবে চলতি বছর ই-টিআইএনধারীর তুলনায় রিটার্ন দাখিল কমেছে। ফলে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বেশি জোর দিচ্ছে এনবিআর।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন কাজে ই-টিআইএন প্রদর্শন বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেকেই এনবিআর থেকে তা গ্রহণ করছেন। তবে আয়কর থেকে দূরে থাকতে বা করযোগ্য আয় না থাকায় অনেকেই রিটার্ন দিচ্ছেন না। আয়কর আইনে করযোগ্য আয় না থাকলে কিছু ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও কেউ কেউ এ সুযোগে আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি অর্থবছর মোট ই-টিআইএনধারীর অর্ধেকের বেশি রিটার্ন জমা না দেওয়ায় তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে তাদের ই-টিআইএন নেওয়ার কারণ ও তারা প্রকৃত অর্থেই করের আওতার বাইরে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের তাদের নিজ নিজ করাঞ্চল থেকে এ পর্যালোচনা করা হবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর আগে যারা ই-টিআইএন নিয়েছেন অথচ রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা প্রতি সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ফাইল চেক করে দেখবেন যে কারা দীর্ঘদিন ধরে রিটার্ন দাখিল করছেন না। তবে আমাদের এই উদ্যোগ কোনোভাবেই তাদের ওপর জরিমানা, কর ধার্য করা বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপের জন্য নয়। তবে শিগগিরই কর কর্মকর্তারা রিটার্ন জমা না দেওয়া টিআইএনধারীদের সন্ধানে কাজ শুরু করবে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত টিআইএন নিলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক ছিল করদাতার জন্য। করভীতি কমাতে ও করদাতার সংখ্যা বাড়াতে এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয় এনবিআর। বর্তমানে আয়কর আইন অনুযায়ী ই-টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে করদাতার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে ১৬ হাজার টাকা মূল বেতন হলে, কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা বা নির্বাহী পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করলে, একটি গাড়ি বা বাড়ি থাকলে, কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার বা ফার্মে অংশীদারিত্ব থাকলে, কোম্পানি বা গ্রুপ অব কোম্পানির পর্ষদে থাকলে, জাতীয় বা স্থানীয় কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হলে, জনপ্রতিনিধি হলে, কোনো ক্লাবের সদস্য হলে, শহর অঞ্চলে ট্রেড লাইসেন্স থাকলে, পেশাজীবী (চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার অথবা সমজাতীয় পেশাজীবী) হলে, আয়কর পেশাজীবী হলে, কোনো বণিক বা শিল্প-বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংঘ বা সংস্থার সদস্যপদ থাকলে, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীয় সরকারে কোনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।

উল্লিখিত ক্যাটাগরির মধ্যে কোনো ই-টিআইএনধারী আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে তাদের আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা গুনতে হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ না দেখাতে পারলে পূর্ববর্তী কর বছরে নির্ধারণ হওয়া আয়করের ১০ শতাংশ জরিমানা গুনতে হবে। তবে এটি ১ হাজার টাকার কম হতে পারবে না। এর সঙ্গে প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা হিসাব করতে হবে। এ দুটির যোগফলের মধ্যে যেটি বেশি তা হবে ব্যক্তির জরিমানা। তাছাড়া নতুন করদাতার ক্ষেত্রে এ জরিমানা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করদাতা,আয়কর,এনবিআর,ই-টিআইএন,ভ্যাট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close